সামাজিক যোগাযোগ শেখার পূর্ব শর্ত | Social Communication for Autism Child

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ (Social Communication) শেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়। সামাজিক যোগাযোগ শুধুমাত্র ভাষার দক্ষতা নয়, বরং এটি স্পষ্টভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা, চোখের যোগাযোগ, ইঙ্গিত ব্যবহার, এবং কথোপকথন শেয়ার করার মত ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য এই ক্ষমতাগুলি বিকাশ করতে কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগের পূর্বশর্তগুলি:

১. চোখের যোগাযোগ (Eye Contact):

সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো চোখের যোগাযোগ। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত চোখের যোগাযোগ এড়িয়ে যায়, যা সামাজিক মেলামেশায় বড় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। চোখের যোগাযোগ তৈরি করতে খেলাধুলার মাধ্যমে প্রাকটিস করতে পারেন, যেমন খেলার সময় শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার সঙ্গে কথা বলা।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মনোযোগ ধরে রাখা (Attention Span):

একটি শিশুকে সামাজিকভাবে সক্রিয় হতে হলে তার মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য মনোযোগ ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। সহজ এবং মজার কার্যকলাপের মাধ্যমে মনোযোগ উন্নয়ন সম্ভব, যেমন শিশু যে খেলায় আগ্রহী তার সাথে আরও যোগাযোগ করে তাকে শেখানোর চেষ্টা করা।

৩. ইশারার ব্যবহার (Gestural Communication):

অনেক সময় ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে শিশুরা ইশারা বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে। অটিজম শিশুরা সাধারণত কম ইশারা ব্যবহার করে। এই অভ্যাস উন্নত করার জন্য শিশুকে ছোট ছোট ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে শেখানো যেতে পারে, যেমন হাতের ইশারা বা মাথা নাড়ানোর মাধ্যমে সম্মতি দেওয়া।

৪. শোনার ক্ষমতা (Listening Skills):

সামাজিক যোগাযোগের জন্য ভালো শোনার ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই অন্যদের কথা শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা বোধ করে। এই ক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ছোট গল্প, গান শোনা এবং শ্রবণ ব্যায়াম করানো যেতে পারে।

৫. শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং মুখাবয়বের বোঝাপড়া (Body Language and Facial Expressions):

শিশুরা যখন কারো সাথে যোগাযোগ করে, তখন মুখের অভিব্যক্তি এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের এই অঙ্গভঙ্গি এবং মুখাবয়বের বোঝাপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলার মাধ্যমে বা গল্প বলার সময় শিশুকে বিভিন্ন অভিব্যক্তি দেখিয়ে এই দক্ষতা উন্নয়ন করা যেতে পারে।

৬. পরিবর্তন সহনশীলতা (Flexibility to Changes):

সামাজিক পরিবেশে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা থাকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক পরিবেশে তাদের পরিচয় করানো এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া তাদের সামাজিক যোগাযোগে সহায়ক হতে পারে।

কিভাবে শিশুর সামাজিক যোগাযোগ উন্নয়ন করবেন?

১. অকুপেশনাল থেরাপি:

অকুপেশনাল থেরাপি অটিজম শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়। এর মাধ্যমে শিশুকে ধাপে ধাপে সামাজিক পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা শেখানো হয়।

২. স্পিচ থেরাপি:

স্পিচ থেরাপি বিশেষত শিশুদের ভাষাগত সমস্যা এবং যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নয়নের জন্য কার্যকরী। এই থেরাপির মাধ্যমে অটিজম শিশুরা ভাষা, ইশারা এবং কথোপকথনের মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

৩. বিভিন্ন সামাজিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ:

শিশুকে নিয়মিত বিভিন্ন সামাজিক ইভেন্টে নিয়ে যাওয়া, যেমন পার্কে খেলা বা অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশার সুযোগ দেওয়া। এটি তাদের সামাজিক দক্ষতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের থেরাপি কোথায় পাওয়া যায়?

বাংলাদেশে বিভিন্ন সেন্টারে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সামাজিক যোগাযোগের থেরাপি প্রদান করা হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেন্টার হলো:

  • CRP (Center for the Rehabilitation of the Paralyzed)
  • Autism Welfare Foundation (AWF)
  • শিশু নিউরোলজি এবং ডেভেলপমেন্টাল সেন্টার (Shishu Neurology and Developmental Center, SNDC)

উপসংহার:

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ শেখা সহজ নয়, তবে সঠিক প্রশিক্ষণ, থেরাপি এবং ধৈর্যের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিশুর সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে তাদের জন্য একটি সহায়ক এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top