জ্বর শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করার সময় জ্বর হতে পারে। সাধারণত ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি তাপমাত্রা হলে সেটিকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। অনেক সময় অভিভাবকরা বাচ্চার জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর নয় এবং কিছু ঘরোয়া ও চিকিৎসাগত পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ব্লগে আমরা জানবো, বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়, ওষুধ এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা।
বাচ্চাদের জ্বরের সাধারণ কারণ
🔹 ভাইরাসজনিত সংক্রমণ – যেমন সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, চিকেনপক্স।
🔹 ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ – যেমন গলা ব্যথা, নিউমোনিয়া, ইউরিন ইনফেকশন।
🔹 টিকা নেওয়ার পর জ্বর – শিশুদের অনেক সময় টিকা নেওয়ার পর জ্বর আসতে পারে।
🔹 অতিরিক্ত গরম পরিবেশ – অনেক সময় গরম আবহাওয়া বা অতিরিক্ত কাপড় পরানোর কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
১. কুসুম গরম পানির পট্টি দিন
✔ এক টুকরো পরিষ্কার নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে কপাল, হাত ও পায়ের তালুতে চেপে ধরুন।
✔ খুব বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না, এতে জ্বর হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
২. হালকা কাপড় পরান ও ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন
✔ শিশুকে খুব বেশি গরম কাপড় পরাবেন না।
✔ ঘর হালকা ঠান্ডা রাখুন (ফ্যান বা এসি থাকলে কম স্পিডে চালান)।
৩. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিন
✔ জ্বরের কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়, তাই বেশি করে পানি, ডাবের পানি, ফলের রস ও স্যুপ খেতে দিন।
✔ বুকের দুধ খায় এমন শিশুদের বেশি করে বুকের দুধ দিন।
৪. বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন
✔ বাচ্চাকে বেশি খেলাধুলা করতে দেবেন না, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলুন।
✔ ভালো ঘুম জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
৫. গরম পানি দিয়ে গোসল করান
✔ হালকা কুসুম গরম পানিতে গায়ে পানি ঢাললে শরীরের তাপমাত্রা কমতে সাহায্য করে।
✔ অতিরিক্ত ঠান্ডা বা বরফের পানি ব্যবহার করবেন না।
বাচ্চাদের জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ ও চিকিৎসা
১. প্যারাসিটামল (Paracetamol) ব্যবহার করুন
✔ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে পারেন।
✔ সাধারণত ১০-১৫ mg/kg প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর দেওয়া যেতে পারে।
২. আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) প্রয়োগ
✔ ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তার পরামর্শ দিলে আইবুপ্রোফেন দেওয়া যেতে পারে।
✔ এটি প্যারাসিটামলের চেয়ে বেশি কার্যকর, তবে বেশি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
বাচ্চার জ্বর কখন বিপজ্জনক হতে পারে?
নিচের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান:
⚠ ৩ মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর ১০০.৪°F (৩৮°C) বা বেশি হলে।
⚠ জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
⚠ শিশুর খিঁচুনি হলে বা অচেতন মনে হলে।
⚠ বাচ্চা খাবার খেতে না চাইলে বা খুব বেশি দুর্বল থাকলে।
⚠ শ্বাসকষ্ট হলে বা শরীর নীলচে হয়ে গেলে।
জ্বর প্রতিরোধের উপায়
✅ শিশুকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
✅ পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন।
✅ টিকাসমূহ নির্দিষ্ট সময়ে নিন।
✅ শিশুকে ভিটামিন সি ও আয়রনযুক্ত খাবার খেতে দিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উপসংহার
বাচ্চাদের জ্বর সাধারণত গুরুতর কিছু নয় এবং বেশিরভাগ সময় এটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। ঘরোয়া উপায় ও সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অভিভাবকদের উচিত জ্বরের সময় শিশুর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
