শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকমতো খেয়াল না করলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যার লক্ষণগুলো বোঝা কঠিন হয়, কারণ তারা তাদের আবেগ বা চিন্তা প্রকাশ করতে পারে না। অভিভাবক ও শিক্ষকরা শিশুদের আচরণে কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত। নিচে কিছু সাধারণ মানসিক সমস্যা এবং সেগুলোর লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. অতিরিক্ত উদ্বেগ বা ভয়
শিশুরা মাঝে মাঝে নতুন বা অপরিচিত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হতে পারে। তবে যদি শিশু সবসময়ই অযৌক্তিক ভয় বা উদ্বেগ প্রকাশ করে, তা হলে তা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
- হঠাৎ করে খুব বেশি ভয় পাওয়া
- স্কুলে যাওয়ার ভয়ে কাঁদা বা অসুস্থতার ভান করা
- সামাজিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা বা একা থাকতে চাওয়া
- খিটখিটে মেজাজে থাকা বা অস্থিরতা
২. বিষণ্নতা বা অতিরিক্ত দুঃখিত হওয়া
বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের সমস্যা নয়, শিশুরাও এ সমস্যায় ভুগতে পারে। কিছু লক্ষণ হলো:
- দীর্ঘ সময় ধরে মনমরা থাকা বা কোন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো
- আগের মত খেলা বা পড়াশোনায় মনোযোগ না দেওয়া
- ঘুমের সমস্যা বা অতিরিক্ত ঘুমানো
- খাবারে অরুচি বা অতিরিক্ত খাওয়া
- অপরাধবোধ বা নিজেকে মূল্যহীন ভাবা
৩. আচরণগত সমস্যা
শিশুরা প্রায়ই তাদের মানসিক চাপ বা হতাশা প্রকাশ করতে পারে আচরণের মাধ্যমে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো:
- অত্যধিক রাগ বা চিৎকার করা
- নিয়মিতভাবে স্কুল থেকে পালানো বা পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ
- আক্রমণাত্মক বা ধ্বংসাত্মক আচরণ
- নিয়মিত মিথ্যা বলা বা অসৎ কাজ করা
৪. সামাজিক সমস্যা
শিশুরা তাদের বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটাতে পারছে কি না, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি কোন শিশু সবসময় একা থাকতে চায় বা অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না পারে, তা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
- বন্ধুবিহীন থাকা বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করা
- সহজেই রাগান্বিত বা হতাশ হওয়া
- বন্ধুদের বা পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা
৫. মনোযোগের অভাব বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি
মনোযোগের অভাব বা অতি সক্রিয়তা (ADHD) শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার একটি বড় লক্ষণ। এর লক্ষণগুলো হতে পারে:
- সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
- কোন কাজ শেষ করতে না পারা
- অতিরিক্ত কথা বলা বা এক জায়গায় স্থির না থাকতে পারা
- বারবার স্কুলের নিয়ম ভাঙা
৬. শারীরিক লক্ষণ
অনেক সময় শিশুদের মানসিক সমস্যার কারণে শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এগুলো হলো:
- বারবার মাথা ব্যথা বা পেটের ব্যথার অভিযোগ করা
- শ্বাসকষ্ট বা বমিভাব
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কোন শারীরিক কারণ ছাড়াই অসুস্থতা অনুভব করা
৭. নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা
শিশুদের মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যা বোঝাতে পারে যে শিশু মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
- সহজে ঘুমাতে না পারা বা রাতের ঘুমে সমস্যা
- মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠা
- ভয়ের স্বপ্ন দেখা বা ঘুমানোর সময় ভয় পাওয়া
মানসিক সমস্যা থাকলে কী করবেন?
যদি আপনার শিশুর মধ্যে উপরের যে কোনও লক্ষণ দেখা যায় এবং তা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তবে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন: তার সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
- কাউন্সেলরের সাহায্য নিন: পেশাদার কাউন্সেলর বা মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে পারেন, যারা শিশুদের মানসিক সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞ।
- পরিবারের সহায়তা প্রদান: শিশুকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে পরিবার থেকে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সমর্থন প্রদান করুন।
শিশুদের মানসিক সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত শিশুদের আচরণ ও মানসিক অবস্থার প্রতি নজর রাখা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিশুর মানসিক সমস্যা তাড়াতাড়ি শনাক্ত ও সঠিকভাবে মোকাবিলা করলে তারা ভবিষ্যতে সুস্থ, সুন্দর ও মানসিকভাবে শক্তিশালী জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে।