সেপারেশন অ্যাংজাইটি একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা যা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে তারা তাদের বাবা-মায়ের বা অত্যন্ত কাছের প্রিয় মানুষের সাথে বিচ্ছিন্ন হতে ভয় পায়। শিশুদের মধ্যে এই ধরনের উদ্বেগ সাধারণত ৮-১৮ মাস বয়সে বেশি দেখা যায়, তবে এটি বড়দের মধ্যেও থাকতে পারে।
সাধারণত, সেপারেশন অ্যাংজাইটি তখন তৈরি হয় যখন শিশু মনে করে যে, তাদের বাবা-মা বা প্রিয়জনরা তাদের থেকে আলাদা হলে কিছু খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে। এই সময়ে, শিশুদের জন্য বাবা-মায়ের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদের চলে গেলে তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা তৈরি হয়।
যদিও সেপারেশন অ্যাংজাইটি প্রাথমিক বয়সে একটি স্বাভাবিক বিষয়, তবে যদি এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে বা গুরুতর আকারে প্রবাহিত হয়, তবে তা শিশুর মানসিক এবং আবেগগত বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এবং এটি শিশুদের দৈনন্দিন জীবনেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রভাবটি জার্মানির মতো ব্যস্ত, কর্মজীবী সমাজে আরও প্রবল হতে পারে, যেখানে বাবা-মা তাদের কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হয়।
জার্মানিতে বাবা-মায়ের ব্যস্ততার প্রভাব
- দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং কর্মজীবন:
জার্মানিতে অধিকাংশ বাবা-মায়ের কর্মজীবন অত্যন্ত ব্যস্ত। একটি সাধারণ কর্মদিবসে কর্মজীবী বাবা-মায়ের জন্য প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করা একটি সাধারণ চিত্র। অনেক সময়, অফিসের চাপে বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গ না দিয়ে অন্য দায়িত্বে ব্যস্ত থাকতে পারেন। এটি শিশুদের মধ্যে সেপারেশন অ্যাংজাইটি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা তাদের বাবা-মাকে দীর্ঘ সময় ধরে দেখতে না পায়।
অনেক বাবা-মা যারা ৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় অফিসে থাকেন, তারা কাজের পর ঘরে ফিরলে সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক বা সময় কাটানোর জন্য খুব কম সময় পান। এতে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে, কারণ তারা বুঝতে পারে না যে তাদের বাবা-মা কেন তাদের থেকে দূরে থাকছেন এবং এই প্রস্থানের কারণে তাদের নিরাপত্তা কোথায়।
- সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ:
জার্মানিতে বাবা-মায়েরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক চাপ অনুভব করেন। চাকরির চাপে এবং উচ্চ মানের জীবনধারা বজায় রাখার জন্য বেশিরভাগ সময় তাদের আর্থিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। এতে তারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য সময় না পেয়েও তাদের সন্তানদের জন্য সময় দিতে ব্যর্থ হন। এর ফলস্বরূপ, শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায়। তারা ভাবতে পারে যে বাবা-মা তাদের থেকে বিরত আছেন বা তাদের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে, যদিও বিষয়টি আসলে তাদের কর্মব্যস্ততার কারণে ঘটছে।
এই প্রভাবটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে শিশুর মধ্যে সেপারেশন অ্যাংজাইটি এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেপারেশন অ্যাংজাইটি শিশুর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং তাদের সামাজিক দক্ষতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে তারা অপরিচিত বা নতুন পরিবেশে সমস্যা অনুভব করে।
- সময়ের অভাব:
বাবা-মায়ের জন্য দৈনন্দিন জীবনে কাজ, সংসার, এবং সামাজিক জীবন বজায় রাখা একটি কঠিন কাজ হতে পারে। এই ব্যস্ততার কারণে, তারা কখনোই সন্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটাতে পারেন না, এবং এর ফলে সন্তানের মধ্যে সেপারেশন অ্যাংজাইটি বৃদ্ধি পেতে পারে। শিশু যখন বাবা-মায়ের সঙ্গ না পায়, তখন তার মধ্যে আতঙ্ক এবং দুশ্চিন্তা তৈরি হয়, যা তার মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে।
সেপারেশন অ্যাংজাইটি থেকে মুক্তির উপায়
- বাবা-মায়ের সচেতনতা বৃদ্ধি:
বাবা-মাকে প্রথমে তাদের সন্তানদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যদি তারা বুঝতে পারেন যে তাদের সন্তানদের মধ্যে সেপারেশন অ্যাংজাইটি তৈরি হচ্ছে, তবে তারা তাদের সময়ের ব্যবস্থাপনা করে সন্তানদের সাথে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করবেন। তাদের সন্তানের খেলার মাধ্যমে বা গল্প বলার মাধ্যমে তাদের সান্ত্বনা দেয়া উচিত।
- সন্তানের সাথে মানসিক সংযোগ বৃদ্ধি:
বাবা-মা যখন কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন, তখন তাদের উচিত সন্তানের সাথে মানসিক এবং আবেগগত সংযোগ তৈরি করা। তাদের সন্তানের অনুভূতিগুলি শুনে তা সঠিকভাবে সমাধান করা, তাদের শখ এবং আগ্রহগুলিতে সহায়তা করা শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তা বাড়ায়। এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নের প্রকাশ স্থায়ীভাবে করতে হবে।
- প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা গ্রহণ:
যদি সেপারেশন অ্যাংজাইটি গুরুতর হয়ে যায় এবং শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে, তবে বাবা-মা বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলর বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। একজন পেশাদার কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট শিশুর মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে তাদের জন্য উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন, যা তাদের উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করবে।
- নিয়মিত রুটিন তৈরি করা:
শিশুর মধ্যে নিরাপত্তা অনুভব করার জন্য বাবা-মা একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করতে পারেন। প্রতিদিন একই সময় মা-বাবার কাছ থেকে ভালোবাসা, খেলার সময় এবং খাওয়ার সময় প্রদান করলে শিশুর মধ্যে নিরাপত্তা ও সান্ত্বনা বৃদ্ধি পায়।
অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং
আপনি যদি বা আপনার পরিচিত কেউ সেপারেশন অ্যাংজাইটি বা অন্য কোন মানসিক সমস্যা নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন, তবে আপনি আমার (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকন) কাছ থেকে অনলাইনে নিরাপদ এবং গোপনীয় পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং নিতে পারেন। আপনি আপনার সমস্যার জন্য সঠিক পরামর্শ এবং সহায়তা পেতে rajuakon.com/contact পেজে গিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার মানসিক সুস্থতার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আর অপেক্ষা করবেন না!