মৃগী রোগ (Epilepsy) এমন একটি নিউরোলজিক্যাল অবস্থা যেখানে রোগীর অপ্রত্যাশিতভাবে খিঁচুনি (seizure) হয়। এই খিঁচুনিগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণত মেডিকেশন সহায়ক হয়। তবে মানসিক ও আবেগগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। CBT রোগীর মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং খিঁচুনির পূর্বাভাস চিহ্নিত করতে সহায়ক হতে পারে, যা মৃগী রোগীর জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
মৃগী রোগীদের জন্য সিবিটির কয়েকটি কার্যকর টেকনিক
১. কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring)
- পদ্ধতি: খিঁচুনির ভয় এবং নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত চিন্তায় পরিবর্তন করা।
- কিভাবে করবেন: খিঁচুনির ভয়ে আক্রান্ত হলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “এই ভয়টি কি বাস্তবসম্মত?” এবং “আমার খিঁচুনিগুলো সবসময়ই নিয়ন্ত্রণে থাকে কি না?” নিজেকে আশ্বস্ত করুন যে, মেডিকেশনের সাহায্যে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ বা ভয় পরিহার করার চেষ্টা করুন।
২. ট্রিগার চিহ্নিতকরণ ও ম্যানেজমেন্ট (Trigger Identification and Management)
- পদ্ধতি: খিঁচুনি ঘটানোর সম্ভাব্য ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো মোকাবিলা করা।
- কিভাবে করবেন: আপনার খিঁচুনির ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করুন—যেমন অতিরিক্ত স্ট্রেস, অনিদ্রা, আলো, বা নির্দিষ্ট খাদ্য। এরপর সেই ট্রিগারগুলো কমানোর চেষ্টা করুন এবং যেসব ট্রিগার এড়ানো সম্ভব, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management)
- পদ্ধতি: স্ট্রেস মৃগী রোগীদের খিঁচুনির একটি বড় ট্রিগার হতে পারে, তাই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খিঁচুনি কমানো সম্ভব।
- কিভাবে করবেন: নিয়মিত ধ্যান, মাইন্ডফুলনেস, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ চর্চা করুন। স্ট্রেস কমাতে প্রতিদিনের রুটিনে নিজেকে শিথিল করার সময় বরাদ্দ করুন। এর ফলে স্ট্রেস কমে যাবে এবং খিঁচুনির ঝুঁকিও হ্রাস পেতে পারে।
৪. ইমোশন রেগুলেশন (Emotion Regulation)
- পদ্ধতি: উদ্বেগ বা অতিরিক্ত আবেগ মৃগী রোগীর খিঁচুনির কারণ হতে পারে। এই আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ইমোশন রেগুলেশন কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কিভাবে করবেন: যখন উদ্বেগ বা অতিরিক্ত আবেগ অনুভব করবেন, তখন শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ চর্চা করুন এবং নিজেকে শান্ত রাখার জন্য ধ্যান করুন। আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক চাপ হ্রাস করা সম্ভব।
৫. রিলাক্সেশন টেকনিক (Relaxation Techniques)
- পদ্ধতি: শরীর এবং মনকে শিথিল করার কৌশল, যা খিঁচুনি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- কিভাবে করবেন: অটোজেনিক ট্রেনিং (autogenic training) বা প্রগ্রেসিভ মাংসপেশির রিলাক্সেশন (progressive muscle relaxation) চর্চা করুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া এবং নির্দিষ্ট মাংসপেশিগুলো শিথিল করার মাধ্যমে আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করার চেষ্টা করুন।
৬. প্রোব্লেম সলভিং স্কিল ডেভেলপমেন্ট (Problem-Solving Skills Development)
- পদ্ধতি: খিঁচুনির সময় বা পূর্বাভাসে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তা নিয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করা।
- কিভাবে করবেন: খিঁচুনির সময় কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, তা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ, খিঁচুনি হলে কি করবেন, কোথায় থাকবেন, কাকে জানাবেন এবং পরে কীভাবে সামলাবেন—এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তুতি নিন।
৭. রিলাপ্স প্রিভেনশন (Relapse Prevention)
- পদ্ধতি: খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা, যাতে খিঁচুনির ঝুঁকি কম থাকে।
- কিভাবে করবেন: আপনার খিঁচুনির পূর্বাভাস লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন এবং যদি মনে করেন খিঁচুনি হতে পারে, তবে দ্রুত সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসুন। যেমন, অতিরিক্ত আলো, উদ্বেগ বা ক্লান্তি থেকে দূরে থাকুন।
উপসংহার
মৃগী রোগীদের জন্য সিবিটি তাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং খিঁচুনির ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। যদিও মৃগীর প্রধান চিকিৎসা হিসেবে মেডিকেশন ব্যবহার হয়, সিবিটি রোগীদের মানসিক ও আবেগগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়ক একটি হাতিয়ার। এই কৌশলগুলো নিজের উপর প্রয়োগ করে রোগীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও উন্নত করতে পারেন।