স্ক্যাবিস বা গালাফড়া হলো একটি ত্বকের সংক্রমণ, যা পরজীবী Sarcoptes scabiei দ্বারা হয়। এই রোগটি খুবই সংক্রামক এবং দ্রুত একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। স্ক্যাবিস সাধারণত ত্বকের নিচে ছোট ছোট সুচালো ফোঁড়া বা গর্ত তৈরি করে, যা তীব্র চুলকানি এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত জনাকীর্ণ এলাকায়, যেমন হোস্টেল, স্কুল, বা একাধিক মানুষ বসবাস করে এমন স্থানে দ্রুত ছড়ায়।
স্ক্যাবিসের কারণ
স্ক্যাবিসের প্রধান কারণ হলো Sarcoptes scabiei নামক পরজীবী মাইট। এই মাইটগুলো ত্বকের নিচে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। এর ফলে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং চুলকানি দেখা দেয়। মাইট সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে স্ক্যাবিস ছড়ায়।
ছড়ানোর প্রধান মাধ্যমগুলো হলো:
- সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি স্পর্শ
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা বা তোয়ালে ব্যবহার করা
- জনাকীর্ণ বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ
স্ক্যাবিসের লক্ষণ
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ তীব্র চুলকানি। তবে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়:
১. তীব্র চুলকানি (Severe Itching)
স্ক্যাবিসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র চুলকানি, বিশেষত রাতে। এটি এতটাই অসহ্য হতে পারে যে, ত্বক চুলকাতে চুলকাতে ক্ষত বা ফোড়া হয়ে যেতে পারে।
২. লাল ফোঁড়া বা গর্ত (Red Bumps or Blisters)
স্ক্যাবিস আক্রান্ত ত্বকে ছোট ছোট লাল ফোঁড়া বা গর্ত দেখা দেয়। এই ফোঁড়াগুলো সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, কব্জির কাছে, কনুই, কোমরের চারপাশে, নাভির চারপাশে এবং যৌনাঙ্গের কাছে হতে পারে।
৩. ত্বকের ক্ষত (Skin Rash)
চুলকানির কারণে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষতগুলো কখনো কখনো ইনফেকশনে রূপান্তরিত হতে পারে, যা ত্বকের আরও ক্ষতি করতে পারে।
৪. চর্মকোষের গর্ত (Burrows on the Skin)
মাইটগুলো ত্বকের নিচে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করে, যা সূক্ষ্ম গর্তের মতো দেখা যায়। এই গর্তগুলো স্ক্যাবিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
স্ক্যাবিসের প্রতিকার
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা প্রয়োজন এবং এটি ঘরে বসে সম্পূর্ণ আরোগ্য করা সম্ভব নয়। সঠিক ওষুধ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্ক্যাবিস পুরোপুরি নিরাময় করা যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার এবং পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:
১. ওষুধের প্রয়োগ
চিকিৎসকরা সাধারণত স্ক্যাবিসের জন্য প্রমিথ্রিন (Permethrin) নামক একটি ক্রিম প্রয়োগ করতে বলেন, যা মাইট এবং তাদের ডিম ধ্বংস করে। এই ক্রিমটি ত্বকের সংক্রমিত স্থানে ব্যবহার করতে হয়।
২. ওষুধ সেবন
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারেন, যা ত্বকের চুলকানি ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ায়, তাই ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সংক্রমিত কাপড়, বিছানা ও তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
৪. পরিবারের সবার চিকিৎসা
স্ক্যাবিস একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়, তাই বাড়ির সব সদস্যের চিকিৎসা একসঙ্গে করা জরুরি।
৫. পোশাক এবং বিছানার চাদর পরিষ্কার করুন
সংক্রমণ রোধ করার জন্য সংক্রমিত ব্যক্তির পোশাক, বিছানার চাদর এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিস গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা জরুরি।
৬. সাবধানতা অবলম্বন
স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ানোর রোগ হওয়ায় যতক্ষণ পর্যন্ত এটি পুরোপুরি নিরাময় না হয়, ততদিন জনাকীর্ণ স্থান এবং অন্যদের থেকে দূরে থাকা উচিত।
স্ক্যাবিস একটি সংক্রমণজনিত রোগ, যা দ্রুত ছড়ায় এবং তীব্র অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এটি নিরাময় করা সম্ভব। তাই, যদি স্ক্যাবিসের লক্ষণ দেখা দেয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।