অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অনেকেই জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। সামি, একটি ১০ বছর বয়সী ছেলে, যিনি অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন, এখন স্বাভাবিক স্কুলে পড়ছে। এটি কেবলমাত্র সামির পরিশ্রম এবং তার বাবা-মায়ের অদম্য চেষ্টার ফলাফল।
সামির অটিজমের প্রথম লক্ষণ:
সামির বয়স যখন দুই বছর, তখন থেকেই তার বাবা-মা বুঝতে পারেন যে সামির বিকাশে কিছু সমস্যা রয়েছে। সামি চোখে চোখে তাকাতো না, কথা বলতেও দেরি হচ্ছিল। এছাড়া, সে একই কাজ বারবার করত এবং সামাজিক মেলামেশায় আগ্রহ দেখাতো না। এরপরে তার বাবা-মা একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন এবং সামির অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) নির্ণয় করা হয়।
থেরাপি এবং শিক্ষা:
সামির বাবা-মা তাকে দ্রুতই বিভিন্ন থেরাপি ও শিক্ষার পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল:
- অকুপেশনাল থেরাপি: এটি সামির সেন্সরি এবং মোটর স্কিল উন্নত করতে সাহায্য করে।
- স্পিচ থেরাপি: সামির ভাষাগত উন্নতি ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি: সামির সেন্সরি ইস্যুগুলি মোকাবিলা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হয়।
অভিভাবকের ভূমিকা:
সামির বাবা-মা তার উন্নতির জন্য ধৈর্য, ভালোবাসা এবং সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। তারা তাকে বাড়িতে প্রতিদিন থেরাপি করানো এবং একটি নিয়মিত রুটিনে অভ্যস্ত করান। তারা সামির আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী শেখানোর কৌশল ব্যবহার করেন, যা সামির শেখার আগ্রহ বাড়ায়।
স্কুলে ফেরা:
অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু যখন সময়মতো থেরাপি পায়, তখন তারা অন্যান্য শিশুদের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। সামি নিয়মিত থেরাপি এবং তার শিক্ষার উন্নতির ফলে এখন একটি স্বাভাবিক স্কুলে পড়াশোনা করছে। সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে মিলে যেতে পারছে এবং তার পড়াশোনায়ও ভালো করছে।
কীভাবে সামির উন্নতি সম্ভব হল:
- নিয়মিত থেরাপি: সঠিক থেরাপি এবং এর ধারাবাহিক প্রয়োগ ছিল সামির উন্নতির প্রধান কারণ।
- শিক্ষক এবং থেরাপিস্টদের সমন্বয়: সামির শিক্ষক এবং থেরাপিস্টরা একসাথে কাজ করে তার বিকাশে সহায়ক হন।
- রুটিন এবং শৃঙ্খলা: সামির দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা এবং রুটিন বজায় রাখা তার সামাজিক ও শিক্ষাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার:
অটিজম কোন স্থায়ী বাধা নয়। সঠিক দিকনির্দেশনা, থেরাপি এবং অভিভাবকদের সহায়তায় অটিজম আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। সামির সফলতার গল্প আমাদের সকলকে এই বিশ্বাস দেয় যে, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে অটিজমকে জয় করা সম্ভব।