শিশুদের প্রমিটিভ রিফ্লেক্স TLR এর ভূমিকা | বাচ্চার অটোমেটিক মুভমেন্ট

শিশুর জন্মের পর থেকে কিছু স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলন দেখা যায়, যেগুলোকে প্রমিটিভ রিফ্লেক্স বলা হয়। এর মধ্যে একটি হলো TLR (Tonic Labyrinthine Reflex), যা শিশুর স্বাভাবিক মুভমেন্ট ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রিফ্লেক্স শিশুর শরীরের মাংসপেশীর টোন এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

TLR (Tonic Labyrinthine Reflex) কী?

Tonic Labyrinthine Reflex (TLR) হলো একটি প্রমিটিভ রিফ্লেক্স যা শিশুর মাথা এবং শরীরের মুভমেন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি শিশুদের আদি রিফ্লেক্সগুলোর মধ্যে একটি এবং বাচ্চার স্থানিক সচেতনতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

TLR সাধারণত জন্মের সময় সক্রিয় থাকে এবং ৬ মাসের মধ্যে ক্রমান্বয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদি এই রিফ্লেক্স দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে এটি বাচ্চার শারীরিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

TLR রিফ্লেক্সের কাজ:

TLR রিফ্লেক্স শিশুর শরীরের বিভিন্ন অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি বাচ্চার শরীরের মাংসপেশীর টোন বজায় রাখতে এবং ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।

দুই ধরণের TLR:

  1. TLR Forward (মাথা সামনে নিয়ে যাওয়া):
    • শিশুর মাথা যখন সামনে বা নিচের দিকে থাকে, তখন শরীরের মাংসপেশীগুলো টান টান হয়ে যায়। এটি শিশুর শরীরকে মোচড় দেয় এবং এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।
  2. TLR Backward (মাথা পেছনে নেওয়া):
    • যখন শিশুর মাথা পেছনে ঝুঁকে থাকে, তখন শরীরের মাংসপেশীগুলো শিথিল হয়ে যায়। এটি শিশুর শরীরকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং স্থির অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে।

TLR রিফ্লেক্সের ভূমিকা:

  1. অঙ্গবিন্যাস নিয়ন্ত্রণ: TLR শিশুর অঙ্গবিন্যাস বা পোষ্টার ঠিক রাখতে সহায়ক। মাথার অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সঠিকভাবে সাড়া দেয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখে।
  2. ভূমি থেকে ওঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ: শিশুর চলাফেরা শুরু করার আগে এই রিফ্লেক্স ভূমিকা পালন করে। TLR-এর মাধ্যমে শিশুর মাংসপেশী এবং সংযোগ তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে দাঁড়ানো এবং হাঁটাচলার জন্য প্রয়োজনীয়।
  3. মাংসপেশীর টোন নিয়ন্ত্রণ: বাচ্চার মাংসপেশীগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় টান টান হয়ে থাকে এবং শরীরের অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সাড়া দেয়।

TLR সমস্যা হলে কী হতে পারে?

যদি TLR রিফ্লেক্স বাচ্চার ৬ মাসের পরও অব্যাহত থাকে, তবে এটি বাচ্চার শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে কিছু সমস্যার উদাহরণ হলো:

  • হাঁটাচলার সমস্যা: বাচ্চা ভারসাম্য রাখতে সমস্যায় পড়তে পারে, যার ফলে হাঁটাচলার বিলম্ব দেখা দিতে পারে।
  • মাংসপেশীর টান: অতিরিক্ত মাংসপেশীর টান থাকলে বাচ্চার শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে নাড়ানো কঠিন হয়ে যায়।
  • সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যা: বাচ্চা স্বাভাবিক সেন্সরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সমস্যা অনুভব করতে পারে, যেমন স্থানিক সচেতনতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখা।

কিভাবে TLR উন্নত করা যায়?

TLR উন্নত করার জন্য বিশেষ থেরাপি এবং অনুশীলন করা যেতে পারে। পেশাদার থেরাপিস্টের সাহায্যে বাচ্চাকে বিভিন্ন মুভমেন্ট থেরাপি করানো যেতে পারে, যা তাদের শরীরের ভারসাম্য এবং মাংসপেশীর টোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

উপসংহার:

Tonic Labyrinthine Reflex (TLR) শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাদের শরীরের মাংসপেশীর টোন এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। বাচ্চার অটোমেটিক মুভমেন্ট এবং শারীরিক উন্নতির জন্য এটি অপরিহার্য। তবে যদি এটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top