গুটি বসন্ত রোগের প্রতিকার

গুটি বসন্ত (Chickenpox) একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা ভ্যারিসেলা-জস্টার ভাইরাসের কারণে ঘটে। এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং প্রাথমিকভাবে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও এই রোগ হতে পারে। গুটি বসন্ত হলে ত্বকের ওপর ছোট ছোট ফোসকার মতো দাগ ওঠে, যা চুলকানি এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। রোগটি সাধারণত ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

গুটি বসন্তের প্রতিকার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

গুটি বসন্তের লক্ষণ:

  • শরীরে ছোট ছোট গুটি বা ফোসকা ওঠা
  • তীব্র চুলকানি
  • জ্বর
  • মাথা ব্যথা
  • দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা
  • পেটে ব্যথা
  • শুষ্ক কাশি

    raju akon youtube channel subscribtion

গুটি বসন্তের প্রতিকার:

১. বেড রেস্ট ও বিশ্রাম:

গুটি বসন্তের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই সময়ে শিশুকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে এবং তাকে বিশ্রামে থাকতে সহায়তা করতে হবে।

২. সঠিক চিকিৎসা:

গুটি বসন্তের চিকিৎসায় কোন নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। যেমন:

  • জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট বা সিরাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৩. ঠান্ডা পানির স্নান:

শরীরে চুলকানি ও ফোসকার কারণে অনেক সময় বিরক্তি হতে পারে। তাই দিনে একবার ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান করলে ত্বকের ফোসকা থেকে আরাম পাওয়া যায় এবং চুলকানি কমে। স্নানের পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে ফেলতে হবে।

৪. চুলকানি কমানোর জন্য লোশন বা ক্রিম:

চুলকানি কমাতে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালামাইন লোশন বা বিশেষ মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বকের তীব্র চুলকানি প্রশমিত করে এবং ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমায়।

৫. নখ ছোট রাখা:

চুলকানির কারণে রোগীরা অনেক সময় ফোসকায় নখ লাগিয়ে চুলকাতে থাকেন। এর ফলে ত্বকে সংক্রমণ (Infection) হতে পারে। তাই নখ ছোট রাখা এবং হাত পরিষ্কার রাখা জরুরি।

৬. পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:

গুটি বসন্তের সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন। তাই পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস, এবং অন্যান্য তরল পানীয় খাওয়া উচিত। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

৭. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:

রোগীর বিছানা, কাপড়, তোয়ালে, এবং অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস পরিষ্কার রাখা জরুরি। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেজন্য ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা উচিত।

৮. ব্যক্তিগত জিনিস আলাদা রাখা:

গুটি বসন্ত একটি সংক্রামক রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্যদের থেকে আলাদা রাখা জরুরি, যাতে রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

গুটি বসন্ত প্রতিরোধে টিকা:

গুটি বসন্ত প্রতিরোধে ভ্যারিসেলা (Varicella) নামক একটি টিকা রয়েছে, যা এই রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা এখনও গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়নি বা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তাদের জন্য এই টিকা অত্যন্ত কার্যকর।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:

  • গুটি বসন্তে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা রাখা।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করা।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

গুটি বসন্তের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি রোগীর জ্বর বেশি থাকে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, বা ফোসকার কারণে অতিরিক্ত ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হবে।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top