সুখী দাম্পত্যজীবন থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া একটি জটিল এবং সূক্ষ্ম বিষয়। এর পেছনে অনেক মনস্তাত্ত্বিক, মানসিক এবং সামাজিক কারণ থাকতে পারে, যা মানুষকে পরকীয়ার দিকে টেনে নিতে পারে। যদিও দাম্পত্য জীবন সুখী এবং পরিপূর্ণ বলে মনে হয়, কিছু অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ের প্রভাবেই মানুষ পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারে।
পরকীয়ার প্রধান কারণসমূহ
১. আবেগগত অপূর্ণতা:
অনেক সময় দাম্পত্য জীবনে সবকিছু ঠিক থাকলেও আবেগগতভাবে একে অপরের কাছ থেকে পূর্ণতা অনুভব না করলে মানুষ অন্য কারো কাছে সেই অপূর্ণতা পূরণের চেষ্টা করে। আবেগের অভাব অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ফাটল তৈরি করতে পারে।
২. একঘেয়েমি ও উত্তেজনার অভাব:
দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো একঘেয়েমি। কিছু মানুষ সম্পর্কের প্রথম দিকের উত্তেজনা ও নতুনত্বের অভাব অনুভব করতে শুরু করে। তারা সম্পর্কের বাইরে নতুন উত্তেজনা ও অভিজ্ঞতা খুঁজে পেতে চেষ্টা করে, যা পরকীয়া সম্পর্কের কারণ হতে পারে।
৩. অন্যের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ:
শারীরিক আকর্ষণ দাম্পত্য জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অনেক সময় সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ কমে গেলে বা অন্য কারো প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলে পরকীয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
৪. আত্মবিশ্বাসের অভাব:
কেউ কেউ নিজেকে মূল্যহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। পরকীয়ার মাধ্যমে তারা নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেন। অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক করে তারা নিজেদের আরও মূল্যবান মনে করেন।
৫. যোগাযোগের অভাব:
অনেক সময় সঙ্গীর সঙ্গে সঠিকভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারার ফলে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দূরত্বই সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সঙ্গে আবেগ ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
৬. প্রতিশোধের মানসিকতা:
কখনও কখনও মানুষ প্রতিশোধের মনোভাব থেকে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। যদি একজন সঙ্গী বিশ্বাসঘাতকতা করে, অন্যজন প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা থেকে পরকীয়া করতে পারে।
৭. প্রাচীন সম্পর্কের পুনর্জাগরণ:
অনেক সময় পুরনো সম্পর্ক বা প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ হলে পুরনো আবেগ ও অনুভূতি জেগে ওঠে। এর ফলে মানুষ আবার সেই সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে।
পরকীয়া সম্পর্কের পরিণতি
পরকীয়া সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এটি বিশ্বাসঘাতকতার একটি রূপ এবং এর ফলে সম্পর্কের মধ্যে গভীর আঘাত এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় এর ফলস্বরূপ সম্পর্ক ভেঙে যায় এবং দাম্পত্য জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
পরকীয়া সম্পর্ক এড়ানোর উপায়
- সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ: সম্পর্কের যেকোনো সমস্যা বা অসন্তোষ নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- সম্পর্কে নতুনত্ব আনা: একঘেয়েমি কাটানোর জন্য সম্পর্কের মধ্যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা উচিত। একসঙ্গে নতুন কিছু করা সম্পর্ককে নতুন রূপ দিতে পারে।
- আত্মমূল্যায়ন: নিজেকে মূল্যবান ও আত্মবিশ্বাসী রাখতে আত্মমূল্যায়নের চেষ্টা করতে হবে।
- বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীলতা: সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস তৈরি করা জরুরি।
উপসংহার
সুখী দাম্পত্যজীবন থাকা সত্ত্বেও পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে এর ফলে সম্পর্কের গভীর ক্ষতি হতে পারে। সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস, সম্মান এবং খোলামেলা যোগাযোগ বজায় রেখে দাম্পত্য জীবনে পরকীয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব।