প্লিজ হেল্প। 😭😭😭😭এখানে ত অনেক শিক্ষিত মানুষ আছেন আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ একটু পরামর্শ চাই।
মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টে আছি।
আমি একজন ছেলে বয়স ২৬, অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আমি জীবনে কিছু না জেনে ভুল করার কারণে নাকি অন্য কোন কারণে সমাজের কারো কাছে মর্যাদা পাচ্ছি না।
আমার বংশের কেউই শিক্ষিত না আবার সমাজেও ৯০ % অশিক্ষিত তাদের সামনে আমি চলাফেরা করার সময় জাস্ট সালাম দিই আর কিছু বকি না কারণ গুরুত্ব পাই না, মাজেমধ্যে মনে হয় সবাই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এমন করতেছে। সবাই আমাকে উপহাস করে এজন্য আমাকে সবসময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে হয়। গ্রামের মানুষের সামনে গেলেই আমাকে দেখে গোপনে সবাই হাসে আমাকে উপহাস করে।বিভিন্নভাবে খেপানোর চেষ্টা করে।আমি নিরবে সয়ে যায় কারো সাথে আজ পর্যন্ত তর্ক ত দূরে থাক কারো দিকে তাকাইও নাই।
এইবার আসি আমার কিছু কারণ এতে আছে
এই যেমনঃ-
১. ছোটবেলা থেকেই আমি কারো সাথে মিশি নাই
২.আমি সবসময় আমার লেখাপড়া নিয়ে বিজি থাকতাম বাড়ির কাজকাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম
৩.আমি খুব বেশি বিনা দাওয়াতে এলাকার বিভিন্ন মেজবান বিবাহ এগুলোতে চলে যেতাম
৪.আমি কলেজ শহরে পড়ে অনার্স এর সময় থেকেই গ্রামেই থাকি। গ্রামে সবাই মনে করে আমার বড় ভাইয়ের বৌ এর সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক আছে। এটা মিত্যা হলেও তাঁরা এটাকে সত্য মনে করে এবং গ্রামের ছোটবড় সবাই আমাকে তাচ্ছিল্য করে।
৫.আমি স্কুলের খন্ডকালীন শিক্ষকতা করি অনার্স পাশ করেছি কিন্তু আমাকে কেউই মর্যাদা দেয় না।
৬. আমাদের সমাজের ৯৯% অশিক্ষিত প্রবাসী।
৭. আমার বাড়িতেও কোন মর্যাদা নেই, আমার ছোট ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক নেই আজকে ৫ বছর।
এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে এলাকায় আমার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পারি সবাই আমাকে স্নেহ করবে।অন্ততপক্ষে আমাকে আর খেপাবে না।মুক্তভাবে জীবন কাটাতে পারব।গ্রামের সবাই অশিক্ষিত তাঁদের সাথে আমার কথাবার্তা আচরণ কিছুতেই মিলে না। তাঁরা আবার তেমন কাউকেই সম্মান দিতে চাই না।
৮. আমরা যে সমাজের সেটা আমাদের সমাজ না আমাদের আদি সমাজ ছোট হওয়াতে আমরা বর্তমান সমাজটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।
আমি আপনাদের কাছে সুপরামর্শ চাই আমার এখানে কি করা উচিত। আমি এ নিয়ে খুব বেশি ডিপ্রেশনে আছি।
পরামর্শঃ
প্রথমেই বলতে চাই, আপনার মানসিক কষ্ট এবং বিচ্ছিন্নতা অনুভব করা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং সাহায্য চাওয়া একটি সাহসী পদক্ষেপ। চলুন আপনার সমস্যাগুলো একে একে সমাধানের চেষ্টা করি।
আপনার সমস্যার সমাধান
১. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মিশ্রণ: ছোটবেলা থেকেই কারো সাথে মিশতে না পারার কারণে আপনার সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হতে পারে। ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে শুরু করুন। প্রথমে স্বল্প আলাপচারিতা করুন এবং ধীরে ধীরে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়ান। সম্পর্ক তৈরি করতে সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন।
২. সম্প্রদায়ে অংশগ্রহণ: যদিও আপনি পড়াশোনা এবং বাড়ির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তবুও সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন মেজবান ও বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিন, তবে বিনা দাওয়াতে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. মিথ্যা অভিযোগ মোকাবেলা: আপনার বড় ভাইয়ের বৌ-এর সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ মিথ্যা হলেও, এটি একটি বড় সমস্যা। এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলুন এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি বা আপনার শিক্ষককে এই বিষয়ে জানিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন।
৪. পেশাগত সম্মান: আপনি স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন এবং অনার্স পাস ও হয়ে যাবে, এটি একটি বড় অর্জন। কিন্তু গ্রামের অশিক্ষিত সমাজে আপনার মর্যাদা কম। এই ক্ষেত্রে, ধৈর্য ধরুন এবং আপনার কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করুন। সময়ের সাথে সাথে মানুষ আপনার প্রতিভা এবং পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে।
৫. পারিবারিক সম্পর্ক: আপনার ছোট ভাইয়ের সাথে পাঁচ বছর ধরে সম্পর্ক নেই। পারিবারিক সমস্যা সমাধান করতে ধীরে ধীরে যোগাযোগের চেষ্টা করুন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবারের বয়স্ক বা সম্মানিত ব্যক্তির সাহায্য নিন।
আপনার মর্যাদা পুনরুদ্ধার
১. সমাজের সাথে মিশে থাকা: ধীরে ধীরে সমাজের সাথে মিশুন। ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন, যেমন দোকানে বা বাজারে গেলে মানুষের সাথে কথা বলুন।
২. সম্মান অর্জন: আপনার কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে সম্মান অর্জন করুন। ধৈর্য ধরুন এবং সময় দিন, মানুষ ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রহণ করবে।
৩. নেতিবাচক মন্তব্য এড়ানো: কেউ উপহাস করলে বা কটূক্তি করলে ধৈর্য ধরে এড়িয়ে যান। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন এবং আপনার লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় থাকুন।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য: আপনি বর্তমানে ডিপ্রেশনে আছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। প্রয়োজন হলে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকের সাহায্য নিন। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে।
সমাজের মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করতে সময় লাগে। আপনার পরিশ্রম এবং ধৈর্য দিয়ে আপনি অবশ্যই সমাজে আপনার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।
শুভেচ্ছান্তে,
রাজু আকন
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট