শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সুস্থ পেট এবং পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত জরুরি। কৃমির আক্রমণ এবং অপুষ্টি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই কীভাবে শিশুর কৃমি এবং অপুষ্টি দূর করা যায়।
শিশুর কৃমির লক্ষণসমূহ
শিশুরা কৃমিতে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
- পেটব্যথা
- বারবার মলত্যাগ
- ক্ষুধামন্দা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা
- ওজন কমে যাওয়া
- ত্বকে চুলকানি (বিশেষ করে মলদ্বারে)
- ঘুমের সমস্যা
শিশুর কৃমি দূর করতে করণীয়
১. নিয়মিত কৃমির ওষুধ সেবন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, ছয় মাস বা এক বছরের ব্যবধানে শিশুকে কৃমির ওষুধ সেবন করাতে হবে। কৃমির ওষুধ কৃমির ডিম ধ্বংস করে এবং শিশুর শরীর থেকে কৃমি বের করে দেয়।
২. হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
শিশুর কৃমির সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া জরুরি।
টিপস:
- সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- নখ ছোট রাখুন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
৩. খাবার পরিষ্কার করে খাওয়ান
শিশুকে কাঁচা বা অপরিষ্কার ফল ও সবজি খাওয়ানো উচিত নয়। সব সময় ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে তারপর খাওয়াতে হবে। এছাড়া মাছ ও মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়ানো উচিত।
৪. পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন
পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করা শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্টার করা বা ফুটানো পানি ব্যবহার করা উচিত। কাঁচা পানি পানের ফলে কৃমি এবং অন্যান্য সংক্রমণ হতে পারে।
৫. খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলুন
কৃমির সংক্রমণ অনেক সময় মাটির মাধ্যমে হতে পারে। খালি পায়ে হাঁটার ফলে মাটিতে থাকা কৃমির ডিম শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই শিশুকে সব সময় জুতা পরিয়ে রাখা উচিত।
শিশুর অপুষ্টি দূর করতে করণীয়
১. বয়স অনুযায়ী সঠিক খাবার দিন
শিশুর বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার খাওয়ানো জরুরি। শিশুর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, এবং মিনারেল রাখা উচিত।
খাবার:
- প্রোটিন: ডিম, মাংস, ডাল
- কার্বোহাইড্রেট: চাল, রুটি, ওটস
- ভিটামিন ও মিনারেল: শাকসবজি, ফল
২. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ শিশুর হাড় এবং দাঁতের গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশে সহায়ক। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
৩. ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। এগুলো অপুষ্টি দূর করতে সাহায্য করে এবং শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা রোধ করে।
খাবার:
- পালং শাক, ব্রকোলি, ডিম, লাল মাংস
৪. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শিশুর কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়ক। এতে শিশুর শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় এবং হজমের সমস্যা কমে।
খাবার:
- ওটস, ব্রাউন রাইস, পুরো শস্যের পাউরুটি
৫. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শিশুকে কৃমি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
খাবার:
- কমলা, লেবু, আমলকি, কিউই
৬. পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া শিশুর শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায় এবং হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। শিশু যেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিশুর কৃমি এবং অপুষ্টি প্রতিরোধে কিছু বাড়তি পরামর্শ
- শিশুর প্রতিদিনের খাবারে তাজা শাকসবজি এবং ফল রাখুন।
- খেলাধুলার পরপরই শিশুকে হাত-মুখ ধুতে বলুন।
- শিশুরা যাতে সঠিকভাবে মলত্যাগ করে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
- খেলনাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন, কারণ শিশুরা এগুলো মুখে দিতে পারে।
উপসংহার
শিশুর কৃমি এবং অপুষ্টি দূর করতে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে কৃমি ও অপুষ্টি থেকে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। তাই, সচেতন থাকুন এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.