প্লাটিলেট (Platelet) রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। শরীরে কোনো আঘাত বা রক্তক্ষরণ হলে প্লাটিলেট ক্ষতস্থানে জমাট বাঁধিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। কিন্তু প্লাটিলেটের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেলে শরীরে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা জানব প্লাটিলেটের ভূমিকা, এর আদর্শ সংখ্যা, প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ঝুঁকি, এবং কতটা নিচে নামলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
প্লাটিলেট কী এবং এর আদর্শ সংখ্যা
১. প্লাটিলেট কী?
প্লাটিলেট হলো রক্তের ক্ষুদ্র কোষ যা হাড়ের মজ্জা (Bone Marrow) থেকে উৎপন্ন হয়। এটি রক্তক্ষরণ বন্ধ এবং ক্ষতস্থানে জমাট বাঁধাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. প্লাটিলেটের আদর্শ সংখ্যা
- সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ১,৫০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ প্রতি মাইক্রোলিটার (μL) থাকে।
- এই সীমার মধ্যে থাকলে প্লাটিলেট তার স্বাভাবিক কাজ সম্পাদন করতে পারে।
প্লাটিলেট কত হলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে?
১. ১,০০,০০০ প্রতি μL-এর নিচে:
- এই পর্যায়ে প্লাটিলেটের সংখ্যা কম হলেও তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয় না। তবে এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
২. ৫০,০০০ প্রতি μL-এর নিচে:
- মৃদু আঘাতেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- অপারেশন বা বড় ধরনের আঘাতে গুরুতর রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. ২০,০০০ প্রতি μL-এর নিচে:
- স্বাভাবিকভাবে বা সামান্য আঘাতেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, বা ত্বকের নিচে লালচে চিহ্ন দেখা যেতে পারে।
৪. ১০,০০০ প্রতি μL-এর নিচে:
- প্লাটিলেটের সংখ্যা যদি ১০,০০০-এর নিচে নেমে যায়, তবে এটি জীবনঘাতী হতে পারে।
- মস্তিষ্ক, পেট বা অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
৫. ৫,০০০ প্রতি μL-এর নিচে:
- এই পর্যায়ে রক্ত জমাট বাঁধার কার্যকারিতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
- এটি মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে।
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ
১. ডেঙ্গু জ্বর
বাংলাদেশে প্লাটিলেট কমার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ডেঙ্গু। ডেঙ্গু ভাইরাস প্লাটিলেট ধ্বংস করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।
২. ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা
ইমিউন সিস্টেম কখনো কখনো নিজের প্লাটিলেটকেই ধ্বংস করে। এটি ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (ITP) নামে পরিচিত।
৩. ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড
এই রোগগুলো প্লাটিলেটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
৪. কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি
ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত থেরাপি হাড়ের মজ্জার কার্যকারিতা হ্রাস করে, যার ফলে প্লাটিলেট উৎপাদন কমে যায়।
৫. বিষক্রিয়া বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ঔষধ যেমন পেইন কিলার বা অ্যান্টিবায়োটিক প্লাটিলেট কমিয়ে দিতে পারে।
প্লাটিলেট বাড়ানোর উপায়
১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
- ভিটামিন B12 ও ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দুধ, পালংশাক এবং কলা।
- আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস এবং ডার্ক চকলেট।
২. প্রাকৃতিক প্রতিকার
- পেঁপে পাতা: পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে কার্যকর।
- গমের ঘাসের রস: রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. হাইড্রেটেড থাকুন
পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যা রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি প্লাটিলেট সংখ্যা অত্যন্ত কমে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- নাক, মাড়ি বা ত্বক থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ।
- শরীরে লাল বা বেগুনি দাগ।
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
- ডেঙ্গু বা অন্য জ্বরে প্লাটিলেট দ্রুত কমতে থাকা।
উপসংহার
প্লাটিলেট শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্লাটিলেট সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তাই লক্ষণ দেখা দিলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
