গর্ভাবস্থায় রানের চিপায় ব্যথা: কারণ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা এবং অস্বস্তি দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রানের চিপায় ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। এটি সাধারণত তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে বেশি হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার আগের পর্যায়েও দেখা দিতে পারে। এ ব্যথার কারণে হাঁটা-চলা, বসা বা শোয়াতে অস্বস্তি তৈরি হয়।

রানের চিপায় ব্যথার কারণ:

১. হরমোনের পরিবর্তন:

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন শরীরের লিগামেন্টগুলোকে শিথিল করে দেয়, যার ফলে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে, রিলাক্সিন হরমোন শরীরের পেশি ও লিগামেন্টকে নরম করে দেয়, যা ব্যথার অন্যতম কারণ।

২. শিশুর অবস্থান:

  • গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ার সাথে সাথে পেশি ও স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। শিশুর অবস্থানও ব্যথার কারণ হতে পারে, কারণ বাচ্চা যখন মায়ের পেলভিসের দিকে নামতে শুরু করে, তখন নিতম্ব এবং রানের চিপায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

    raju akon youtube channel subscribtion

৩. রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন:

  • গর্ভাবস্থায় রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তনের কারণে শরীরের কিছু অংশে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে রানের এলাকায় রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে না হলে ব্যথা হতে পারে।

৪. ওজন বৃদ্ধি:

  • গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বাড়ে, যার ফলে শরীরের নিম্নাংশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এটি রানের চিপায় ব্যথার অন্যতম কারণ।

৫. সায়াটিকা:

  • সায়াটিক নার্ভ গর্ভাবস্থায় চাপে পড়ে যেতে পারে, যার কারণে রানের চিপায় এবং কোমরের নিম্নাংশে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত একটি পায়ে হয় এবং হাঁটা-চলায় কষ্ট হয়।

গর্ভাবস্থায় রানের চিপায় ব্যথার প্রতিকার:

১. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম:

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম, পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমাতে পারে। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. উপযুক্ত বিশ্রাম:

  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে না থেকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। শোয়াতে গেলে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে রাখুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে এবং ব্যথা কমবে।

৩. উষ্ণ সেঁক:

  • ব্যথা হলে উষ্ণ সেঁক দেওয়া একটি কার্যকর পদ্ধতি। একটি হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে ব্যথার স্থানে হালকাভাবে সেঁক দিন। এতে ব্যথা অনেকাংশে কমবে।

৪. ম্যাসাজ:

  • পেশির ব্যথা কমাতে নিয়মিত ম্যাসাজ করা যেতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় ম্যাসাজ করার সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

৫. সঠিক আসন ব্যবহার:

  • দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের উপর বেশি চাপ পড়ে। সঠিক আসন ব্যবহার করুন এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন।

৬. শরীরের ভঙ্গি পরিবর্তন:

  • অনেক সময় এক অবস্থানে বেশি সময় থাকলে ব্যথা বাড়তে পারে। তাই মাঝে মাঝে শরীরের ভঙ্গি পরিবর্তন করুন।

৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

  • ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা খুব বেশি হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ওষুধও সেবন করা যেতে পারে, তবে গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা জরুরি।

গর্ভাবস্থায় রানের চিপায় ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করা উচিত নয়। প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, ব্যায়াম এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে, ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top