কাতারে বাবা-মায়ের ব্যস্ততা ও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য

কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা সাধারণত কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হতে পারে। কর্মক্ষেত্রের চাহিদা, অর্থনৈতিক চাপ এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। এ ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।

কাতারে বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণ

১. দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও সীমিত অবসর সময়

কাতারে অভিবাসী বাবা-মায়েদের অনেকেই প্রবাসী শ্রমিক বা চাকরিজীবী হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজের পর মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তির কারণে তারা সন্তানদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে পারেন না।

২. অর্থনৈতিক চাহিদা ও দায়িত্ব

বিভিন্ন খরচ এবং বাংলাদেশে থাকা পরিবারের জন্য টাকা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা অনেক বাবা-মায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে তারা সন্তানদের মানসিক প্রয়োজনের চেয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বেশি গুরুত্ব দেন।

৩. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতা

কাতারের ভিন্ন সংস্কৃতি ও সামাজিক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা সন্তানদের সাথে মেলামেশার সুযোগ সীমিত পান। কাজের ব্যস্ততা এবং সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে সন্তানদের মানসিক ও আবেগিক চাহিদাগুলো অগ্রাহ্য হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

৪. সন্তানদের শিক্ষাগত চাপ

বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা সাধারণত সন্তানদের পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দেন। অনেক সময় তারা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য ও বিনোদনের চেয়ে ভালো রেজাল্টকে বেশি গুরুত্ব দেন, যা শিশুদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

১. একাকীত্ব ও আবেগিক বিচ্ছিন্নতা

যেহেতু বাবা-মা ব্যস্ত থাকেন, অনেক শিশু নিজেদের একাকী ও অবহেলিত মনে করে। তারা বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও সঙ্গ পাওয়ার অভাব অনুভব করতে পারে, যা আবেগিক বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়।

২. উদ্বেগ ও হতাশা

বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত মনোযোগ না পাওয়ার কারণে অনেক শিশু হতাশা ও উদ্বেগের শিকার হয়। তারা নিজেদের প্রয়োজনগুলো প্রকাশ করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে মানসিক চাপে ভুগতে শুরু করে।

৩. আত্মবিশ্বাসের অভাব

যেসব শিশু বাবা-মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন ও উৎসাহ পায় না, তারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে পারে। বিশেষ করে, শিক্ষাক্ষেত্রে বা সামাজিক পরিসরে তারা নিজেদের মূল্যহীন ভাবতে শুরু করতে পারে।

৪. প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার ও আসক্তি

বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে অনেক শিশু মোবাইল, ট্যাব বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সময় কাটায়। এতে তারা ধীরে ধীরে ভার্চুয়াল জগতে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং বাস্তব সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায়।

৫. আচরণগত সমস্যা

পর্যাপ্ত পারিবারিক সংযোগের অভাব অনেক শিশুর আচরণে নেতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তারা সহজেই রেগে যায়, মনোযোগ হারায় এবং সামাজিক সম্পর্ক গঠনে সমস্যার সম্মুখীন হয়।

সমাধান ও করণীয়

১. গুণগত সময় কাটানো

বাবা-মায়েদের উচিত কাজের ফাঁকে হলেও সন্তানদের সাথে সময় কাটানো। একসাথে খাওয়া, গল্প করা বা ছোটখাট পারিবারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

২. সন্তানদের মানসিক চাহিদা বোঝা

শিশুরা শুধু ভালো রেজাল্টের জন্য নয়, বরং মানসিক সমর্থনের জন্যও বাবা-মায়ের দিক থেকে উৎসাহ আশা করে। তাদের চিন্তা, অনুভূতি ও সমস্যাগুলো গুরুত্বসহকারে শোনা দরকার।

৩. সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর সংযোগ গড়ে তোলা

সময়ের অভাব থাকলেও, সন্তানদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা বা তাদের স্কুল-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা পারিবারিক সম্পর্ককে মজবুত করতে পারে।

৪. প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমানো

সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বাবা-মায়ের উচিত তাদের অতিরিক্ত মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিবর্তে বাস্তব জীবনের যোগাযোগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা।

৫. মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণ করা

যদি কোনো শিশু উদ্বেগ, হতাশা বা আচরণগত সমস্যায় ভোগে, তবে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া উচিত। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে চাইলে আপনি অনলাইনে নিরাপদ ও গোপনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিন

যদি আপনি বা আপনার সন্তান মানসিক চাপে ভুগে থাকেন, তবে অনলাইনে নিরাপদ ও গোপনীয় মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: rajuakon.com/contact 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top