ওমানে বাবা-মায়ের ব্যস্ততা ও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য

ওমানে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর জন্য সন্তান পালন এবং পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানো একটি কঠিন সমন্বয়। অনেক বাবা-মা পুরো সময় কাজ করে থাকেন, এবং এর ফলে সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং মানসিক সমর্থন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ওমানে বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষত যখন শিশুরা পর্যাপ্ত মনোযোগ এবং সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। এই ব্লগে, আমরা আলোচনা করব কীভাবে বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কীভাবে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা যেতে পারে।

১. বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের একাকীত্ব

ওমানে বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে অনেক বাবা-মায়ের পেশাগত কারণে একসাথে সময় কাটানো সম্ভব হয় না। বাবা-মা দীর্ঘ সময় কাজ করেন এবং দিনের বেশিরভাগ সময় সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকেন। শিশুরা যখন তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে সঠিক সময় এবং মনোযোগ পায় না, তখন একাকীত্বের অনুভূতি তৈরি হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

এই একাকীত্ব সন্তানের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা এবং শূন্যতার সৃষ্টি করতে পারে। সন্তানদের মনে হতে পারে তারা অবহেলিত, এবং সামাজিক সম্পর্ক গঠনে সমস্যা তৈরি হতে পারে। একাকীত্বের অনুভূতি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

২. পারিবারিক যোগাযোগের অভাব এবং সম্পর্কের ক্ষতি

বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অভাব সৃষ্টি হতে পারে। পরিবারে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি এবং ভালোবাসার অভাব, শিশুর আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যদি সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের মানসিক যোগাযোগ না থাকে, তবে শিশু মনে করতে পারে তারা তার প্রয়োজনীয়তার জন্য অবহেলিত।

এছাড়া, যখন সন্তানদের কাছে বাবা-মায়ের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক দৃঢ় না থাকে, তখন শিশুরা আস্থাহীনতা এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি পেতে পারে, যা তাদের মানসিক অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অতিরিক্ত চাপ এবং পড়াশোনার চাপ

ওমানে অনেক বাবা-মা সন্তানের ভবিষ্যত এবং শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। তবে, এর ফলস্বরূপ সন্তানদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। মা-বাবার আগ্রহ এবং ভবিষ্যতের সফলতা কামনার কারণে অনেক সময় সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয়, যা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, যখন বাবা-মা তাদের কাজের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের পড়াশোনায় যথেষ্ট মনোযোগ দেন না, তখন শিশুর মধ্যে হতাশা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব হতে পারে। এটি তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ হারাতে এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে।

৪. পারিবারিক সমর্থনের অভাব

একটি প্রবাসী পরিবারে যখন বাবা-মা ব্যস্ত থাকেন, তখন সন্তানের মানসিক সমর্থনের অভাব হতে পারে। শিশুদের সবচেয়ে বড় সমর্থন থাকে পরিবারে, এবং যদি তারা সেই সমর্থন না পায়, তবে তাদের মানসিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। সন্তানের মনোভাব, চিন্তা এবং আচরণে তার পরিবারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, এবং সঠিক পরামর্শ এবং সমর্থনের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

৫. সমাধান এবং সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা

ওমানে বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা যেতে পারে।

১. গুণগত সময় কাটানো

বাবা-মায়ের ব্যস্ততার মধ্যে, সন্তানদের সাথে গুণগত সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজের শেষে বা সপ্তাহান্তে পরিবারের সদস্যদের একসাথে সময় কাটানো উচিত। একে অপরের সাথে কথা বলা, গল্প শোনা, বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে বাবা-মা তাদের সন্তানের মানসিক শান্তি এবং ভালবাসা নিশ্চিত করতে পারেন।

এছাড়া, শিশুদের প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য মনোযোগী হয়ে তাদের সমস্যা শোনা এবং সমর্থন দেওয়া উচিত। একে অপরের সাথে সংযুক্তি রাখা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

২. কমিউনিটি এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়া

সন্তানদের সমাজের মধ্যে ভালোভাবে সামাজিকীকরণ করা উচিত। প্রবাসী শিশুদের জন্য সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রবাসী কমিউনিটির অংশ হয়ে উঠা গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের একাকীত্ব কমবে এবং তারা নতুন বন্ধু বানাতে পারবে, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৩. শিক্ষায় সহায়তা এবং চাপ কমানো

বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে সঠিক সহায়তা দেওয়া। তাদের প্রগতি এবং আগ্রহের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। প্রবাসী শিশুদের পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং অবসর কার্যক্রমের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করা উচিত।

৪. মনোবিদ বা থেরাপি সেবা গ্রহণ করা

যদি সন্তানের মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তবে বাবা-মা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করতে পারেন। অনলাইন কাউন্সেলিং বা সাইকোলজিস্টের মাধ্যমে থেরাপি সেবা গ্রহণ করা খুবই কার্যকর হতে পারে। rajuakon.com/contact এর মাধ্যমে আপনি নিরাপদ এবং গোপনীয় পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারেন।

ওমানে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারের জন্য বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা সম্ভব। গুণগত সময় কাটানো, সামাজিক সম্পর্ক গড়া, মানসিক সমর্থন প্রদান এবং প্রফেশনাল সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে সন্তানের মানসিক সুস্থতা রক্ষা করা যেতে পারে। সন্তানদের পাশে থাকা এবং তাদের মনোভাবকে সম্মান জানিয়ে মানসিক চাপ কমানোই সন্তানদের সুখী এবং সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top