মাশরুমের পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন উপকারিতা

মাশরুম প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিকর একটি খাবার, যা শুধুমাত্র স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিলিয়ে খাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাশরুমের বিশেষ পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

এই ব্লগে আমরা মাশরুমের পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ

মাশরুমে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। এটি কম ক্যালোরি যুক্ত এবং প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে:

  • ক্যালোরি: ২২ ক্যালোরি
  • প্রোটিন: ৩.১ গ্রাম
  • ফাইবার: ১.০ গ্রাম
  • ভিটামিন বি৬: ৪% ডেইলি ভ্যালু (DV)
  • ভিটামিন ডি: ১২% ডেইলি ভ্যালু (DV)
  • ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, কপার, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক

এছাড়া, মাশরুমে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে, যা দেহের কোষগুলোকে রক্ষা করে।

raju akon youtube channel subscribtion

মাশরুমের বিভিন্ন উপকারিতা

১. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী

মাশরুমে পটাশিয়াম এবং সেলেনিয়ামের মতো মিনারেল থাকায় এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া মাশরুমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলোকে নষ্ট করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

মাশরুমে খুব কম ক্যালোরি এবং উচ্চ প্রোটিন থাকার কারণে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

৩. হাড় মজবুত করে

মাশরুমে ভিটামিন ডি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যা হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ ভালোভাবে হয় এবং হাড় মজবুত থাকে। এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

মাশরুমে থাকা বিটা-গ্লুকান নামে একটি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত মাশরুম খেলে সর্দি-কাশি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে।

৫. ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে

মাশরুমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়ক। মাশরুমে থাকা পলিফেনল এবং সেলেনিয়াম শরীরের কোষকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৬. রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে

মাশরুমে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন শরীরে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাশরুম অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে

মাশরুমের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। বিশেষ করে এতে থাকা ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

৮. ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক

মাশরুমে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মাশরুম খাওয়ার কিছু সতর্কতা

যদিও মাশরুম পুষ্টিকর এবং উপকারী, তবে বুনো মাশরুম খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কিছু বুনো মাশরুম বিষাক্ত হতে পারে, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই মাশরুম কেনার সময় বাজার থেকে ভালোভাবে সংগ্রহ করা উচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে কেনা উচিত।

মাশরুম একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত মাশরুম খেলে হাড়, হৃদযন্ত্র, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া যায়। এছাড়া এটি ওজন কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় মাশরুম অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top