প্রোবায়োটিক যুক্ত দই আমাদের শরীরের জন্য এক অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রোবায়োটিক হল উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের অন্ত্রে বসবাস করে এবং হজম প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক যুক্ত দই নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের নানা সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই এর পুষ্টিগুণসমূহ
প্রোবায়োটিক দই একাধিক পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণে সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোবায়োটিক দইতে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ৫৫-৭০ ক্যালোরি
- প্রোটিন: ৩.৫-৫ গ্রাম
- ফ্যাট: ১.৫-২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৫-৬ গ্রাম
- ফাইবার: ০.৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৫০-২০০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি: ২-৩% (দৈনিক প্রয়োজনীয়তার)
- প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া (ল্যাকটোবাসিলাস ও বিফিডোব্যাকটেরিয়া): অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই এর ১০টি প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হজমশক্তি উন্নত করে
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যার সমাধানে সহায়ক।
২. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
প্রোবায়োটিক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকারক প্যাথোজেনের সাথে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
প্রোবায়োটিক দইতে ক্যালোরি কম এবং প্রোটিন ও ফ্যাটের ভারসাম্য থাকে, যা ওজন কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এটি খেলে ক্ষুধার অনুভূতি কমে এবং পেট ভরা থাকে।
৪. পেটের গ্যাস ও ফোলাভাব কমায়
যারা প্রায়ই পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য প্রোবায়োটিক দই অত্যন্ত উপকারী। এটি অন্ত্রের গ্যাস এবং ফোলাভাব কমাতে কার্যকর।
৫. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রোবায়োটিক দই অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
৬. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
প্রোবায়োটিক দই ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা হাড়ের গঠন এবং দাঁতের যত্নে সহায়ক। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
৭. কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই নিয়মিত খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৮. মুড ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে
প্রোবায়োটিক দই মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মন ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। এটি ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসায়ও সহায়ক।
৯. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
প্রোবায়োটিক দই শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য রক্ষা করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বলতা উন্নত করতে সহায়ক। এটি ত্বকের মসৃণতা ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১০. ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই শরীরে ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই খাওয়ার কিছু অতিরিক্ত সুবিধা
- ল্যাকটোজ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়: যারা ল্যাকটোজ অসহ্যতায় ভুগেন, তাদের জন্য প্রোবায়োটিক দই সহনশীল হয় এবং ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: প্রোবায়োটিক যুক্ত দই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর।
উপসংহার
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী খাবার। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করা থেকে শুরু করে হাড় মজবুত করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা পর্যন্ত নানা ধরনের উপকারিতা প্রদান করে। তাই, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোবায়োটিক যুক্ত দই অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সুস্থ থাকুন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.