ডালিম, যা বেদানা নামেও পরিচিত, একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এটি ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভরপুর। ডালিমের ছোট ছোট দানা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি স্বাদেও মিষ্টি ও রসালো। এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম, এবং এটি প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ডালিমের পুষ্টিগুণ
ডালিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য উপাদান যা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: ৮৩ ক্যালোরি
- প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১৯ গ্রাম
- ফাইবার: ৪ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ১৭% ডেইলি ভ্যালু (DV)
- ভিটামিন কে: ২১% ডেইলি ভ্যালু (DV)
- ফোলেট (ভিটামিন বি৯): ১৬% ডেইলি ভ্যালু (DV)
- পটাশিয়াম: ২৩৬ মিলিগ্রাম
ডালিমের ঔষধি গুনাগুণ
১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ
ডালিমে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের কোষগুলিকে ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যালসের কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা। ডালিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।
২. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
ডালিমের পলিফেনল এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। এটি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তনালীগুলির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হার্টের কার্যকারিতা ভালো থাকে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
ডালিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো-কেমিক্যাল গুনাগুলি ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধিকে ধীর করে এবং শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এটি সহায়ক।
৪. শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক
ডালিমে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুনাগুলি শরীরে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। প্রদাহ শরীরের অনেক জটিল রোগের কারণ হতে পারে, যেমন বাত, হৃদরোগ, এবং ডায়াবেটিস। নিয়মিত ডালিম খেলে এই সমস্যাগুলোর ঝুঁকি কমানো যায়।
৫. স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক
ডালিম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যারা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে চান, তাদের জন্য ডালিম খুব উপকারী।
৬. ত্বকের যত্নে উপকারী
ডালিমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক। এটি ত্বককে মসৃণ ও লাবণ্যময় করে এবং ত্বকের বয়সজনিত দাগ কমাতে সহায়তা করে। তাছাড়া, ডালিম ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে সজীব রাখে।
৭. হজম শক্তি বাড়ায়
ডালিমের মধ্যে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়। যারা হজম সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ডালিম একটি আদর্শ ফল। এটি বদহজম, গ্যাস এবং পেটের অন্যান্য সমস্যার সমাধানে সহায়ক।
৮. ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে এবং সর্দি-কাশির মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
৯. রক্ত শুদ্ধ করতে সহায়ক
ডালিমে থাকা আয়রন শরীরে রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়, যা রক্তশূন্যতার সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত ডালিম খেলে শরীরের রক্ত শুদ্ধ হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
১০. ওজন কমাতে সহায়ক
ডালিমে ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমায়।
ডালিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণাবলীপূর্ণ ফল, যা শরীরের বিভিন্ন প্রকার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত ডালিম খেলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, হজম সমস্যা, এবং ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান করা যায়। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডালিম অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬
Raju Akon, Counselling Psychologist: