বাসায় বসে কাজ করায় ঘাড়-কোমর ব্যথা, কী করবেন কী করবেন না

বর্তমান সময়ে বাসায় বসে কাজ করা অনেকের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থেকে কাজ করার ফলে অনেকেই ঘাড় ও কোমরে ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। সঠিক উপায় না মেনে বসে কাজ করলে এ ধরনের ব্যথা আরো তীব্র হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ অভ্যাস এবং নিয়ম মেনে চললে ঘাড় ও কোমরের ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কেন ঘাড়-কোমর ব্যথা হয়?

ঘাড়-কোমর ব্যথা প্রধানত নিম্নলিখিত কারণে হয়ে থাকে:

  1. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: একটানা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা ঘাড় এবং কোমরের পেশির উপর চাপ সৃষ্টি করে।
  2. সঠিক ভঙ্গিমা না মেনে বসা: ভুলভাবে বসা, চেয়ারে সঠিকভাবে না বসা বা পিঠ সোজা না রাখা এই সমস্যার অন্যতম কারণ।
  3. চেয়ারের উচ্চতা সঠিক না হওয়া: চেয়ার বা ডেস্কের উচ্চতা সঠিক না হলে ঘাড় এবং কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
  4. বিরতি না নেওয়া: দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে বিরতি না নিলে পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়।
  5. অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ: বাসায় বসে কাজ করার ফলে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, যা পেশি দুর্বল করে।

    raju akon youtube channel subscribtion

ঘাড়-কোমর ব্যথা কমাতে কী করবেন?

১. সঠিক ভঙ্গিমায় বসুন:

  • বসার সময় পিঠ সোজা রাখুন এবং চেয়ারের পিছনে সাপোর্ট ব্যবহার করুন।
  • পায়ের তলা সম্পূর্ণভাবে মাটিতে রাখুন এবং হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো রাখুন।
  • কনুই এমনভাবে রাখুন যেন তা কাঁধের সাপোর্টে থাকে এবং তা কাজের জন্য আরামদায়ক হয়।

২. চেয়ার ও ডেস্কের উচ্চতা ঠিক করুন:

  • চেয়ারের উচ্চতা ঠিকমত সামঞ্জস্য করুন, যাতে আপনার পায়ের নিচে মাটির স্পর্শ থাকে।
  • ডেস্কের উচ্চতা এমনভাবে সামঞ্জস্য করুন যাতে কিবোর্ড ও মাউস ব্যবহারের সময় ঘাড় সোজা থাকে।

৩. নিয়মিত বিরতি নিন:

  • প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ২-৩ মিনিটের বিরতি নিন। এই সময়ে উঠে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, যাতে পেশিতে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন হয়।
  • স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন, যেমন: হাত ও পায়ের স্ট্রেচিং, ঘাড় ও পিঠের স্ট্রেচিং।

৪. শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ান:

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম পেশিগুলিকে নমনীয় ও শক্তিশালী রাখে।
  • হাঁটা, যোগব্যায়াম, বা পিঠের ব্যায়াম ঘাড়-কোমর ব্যথা দূর করতে কার্যকরী।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

  • শরীর হাইড্রেটেড রাখতে দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। এটি পেশির ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায় এবং ব্যথা কমায়।

৬. ঘাড় ও কোমরের ব্যায়াম করুন:

  • প্রতিদিন কিছু ঘাড় ও কোমরের স্ট্রেচিং ব্যায়াম করুন, যা পেশি ও জয়েন্টগুলোকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করবে।

৭. সঠিক বালিশ ব্যবহার করুন:

  • ঘুমানোর সময় সঠিক উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন। খুব বেশি উঁচু বা নিচু বালিশ ঘাড়ের ব্যথা বাড়াতে পারে।

ঘাড়-কোমর ব্যথা এড়াতে কী করবেন না:

১. দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন:

  • দীর্ঘ সময় একটানা বসে থাকার কারণে পেশির উপর বাড়তি চাপ পড়ে। প্রতিবার ৩০ মিনিটের বেশি এক জায়গায় বসে না থাকার চেষ্টা করুন।

২. ভুল পজিশনে বসবেন না:

  • কাজের সময় বেঁকে বসবেন না এবং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা এড়িয়ে চলুন।
  • চেয়ারে বসার সময় কোমরের নিচে সাপোর্ট ব্যবহার করুন।

৩. ভারী ওজন তুলবেন না:

  • কোমর বা পিঠে ব্যথা থাকলে ভারী কিছু তোলার চেষ্টা করবেন না। যদি তুলতেই হয়, তবে হাঁটু বাঁকিয়ে সঠিকভাবে তুলুন।

৪. অতিরিক্ত টান এড়িয়ে চলুন:

  • ঘাড় বা কোমর যদি বেশি টান লাগে, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত চাপ দেওয়া সমস্যাকে আরো জটিল করতে পারে।

ঘাড় এবং কোমর ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করার একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক ভঙ্গিমায় বসা, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে আপনি সহজেই এই ব্যথা দূর করতে পারেন।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top