পিরিয়ডের ৪-৫ দিন আগ থেকে মেজাজ ছিটকে যাওয়া এবং পিরিয়ডের পর আবার ঠিক হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা প্রায়শই প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) এর সাথে সম্পর্কিত। অনেক নারীই এই সমস্যা অনুভব করেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। এই পরিবর্তনগুলো মূলত হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ঘটে, তবে এটির জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আসুন, জেনে নেই এর কারণ এবং মুক্তির উপায়গুলো।
মেজাজ ছিটকে যাওয়ার কারণ
১. হরমোনাল পরিবর্তন (Hormonal Changes):
- পিরিয়ডের আগে শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে।
- এই পরিবর্তনগুলো সরাসরি মেজাজ এবং আবেগের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে নারীরা বিরক্তি, অস্থিরতা, বা দুঃখ অনুভব করতে পারেন।
২. সারোটোনিনের মাত্রা কমে যাওয়া (Drop in Serotonin Levels):
- পিরিয়ডের আগে শরীরে সারোটোনিন নামক হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা মস্তিষ্কের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সারোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে মানসিক চাপ, দুঃখ, এবং মেজাজের ওঠানামা দেখা দিতে পারে।
৩. শারীরিক অস্বস্তি (Physical Discomfort):
- পিরিয়ডের আগে পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমিভাব ইত্যাদি শারীরিক সমস্যাগুলোও মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণ হতে পারে।
- শারীরিক অসুবিধার কারণে নারীরা সহজেই বিরক্ত বা অস্থির বোধ করতে পারেন।
৪. স্ট্রেস ও দৈনন্দিন জীবনের চাপ (Stress and Daily Life Pressures):
- পিরিয়ডের আগে শারীরিক এবং মানসিক স্ট্রেস মেজাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- দৈনন্দিন জীবনের চাপ এবং মানসিক উদ্বেগ মেজাজকে আরও খারাপ করে তোলে।
মুক্তির উপায়
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস (Maintain a Balanced Diet):
- পিরিয়ডের আগে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন, যা শরীরকে শক্তি জোগাবে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
- বিশেষ করে, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন, যা হরমোনাল পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়ক।
২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা (Ensure Adequate Sleep):
- পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম পিরিয়ডের আগে এবং সময়ে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পর্যাপ্ত ঘুম মেজাজকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
৩. ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম (Exercise and Yoga):
- নিয়মিত ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম শরীরের হরমোন ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে।
- বিশেষ করে পিরিয়ডের আগে ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নির্গত হয়, যা মন ভালো রাখে এবং মেজাজ স্থিতিশীল রাখে।
৪. মানসিক চাপ কমানো (Manage Stress):
- ধ্যান, গভীর শ্বাস নেওয়া, এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণ করুন।
- প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ধ্যান করলে মানসিক শান্তি বজায় থাকে এবং মেজাজ স্থিতিশীল থাকে।
৫. হরমোন থেরাপি (Hormone Therapy):
- যদি মেজাজের ওঠানামা খুব বেশি হয় এবং জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তবে একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে হরমোন থেরাপি নিতে পারেন।
- হরমোন থেরাপি হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬. পুষ্টি সম্পূরক গ্রহণ (Take Nutritional Supplements):
- ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টি সম্পূরক গ্রহণ করুন, যা হরমোনাল পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
- একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এগুলো গ্রহণ করা উচিত।
৭. পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা (Seek Support from Family and Friends):
- পিরিয়ডের সময় পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা নিন।
- আপনার অনুভূতিগুলো তাদের সাথে শেয়ার করলে আপনি মানসিক চাপ কমাতে পারবেন এবং তারা আপনার পাশে থাকতে পারে।
উপসংহার
পিরিয়ডের আগে মেজাজ ছিটকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা এবং এটি প্রায় সব নারীরই হয়ে থাকে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি সমস্যাটি অতিরিক্ত হয়, তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হরমোন থেরাপি বা পুষ্টি সম্পূরক গ্রহণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার শরীর এবং মনের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়ক হবে।