তরুণরা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ হলেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। সমাজে তরুণদের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ সময় তাদের জীবনে আসে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তন, যা তাদের মানসিক সুস্থতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তা শুধু তাদের ব্যক্তি জীবনের ওপর নয়, পরিবারের সদস্যদের জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই তরুণদের মানসিক সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করা এবং তাদের সহায়তা প্রদান করা জরুরি।
তরুণদের মানসিক সমস্যা শনাক্ত করার লক্ষণসমূহ
১. অস্বাভাবিক আচরণগত পরিবর্তন
যদি কোনো তরুণ হঠাৎ করেই তাদের স্বাভাবিক আচরণ থেকে দূরে সরে যায়, তবে এটি মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন:
- অতিরিক্ত রাগ বা হতাশা
- বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলা
- আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা উদাসীনতা
২. ঘুমের সমস্যা
তরুণদের মধ্যে ঘুমের সমস্যাও মানসিক সমস্যার একটি প্রধান লক্ষণ। যেমন:
- রাতে ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুমানো
- ঘুমের সময় দুঃস্বপ্ন দেখা
- ঘুমানোর পরেও ক্লান্ত বোধ করা
৩. মাদকাসক্তি
কিছু তরুণ মানসিক চাপ বা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. নিজেকে মূল্যহীন মনে করা
তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা একটি বড় সমস্যা। তারা প্রায়ই নিজেকে মূল্যহীন বা অপারগ মনে করে, যা মানসিক চাপ ও বিষণ্নতার জন্ম দেয়।
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়
১. সঠিক সহায়তা প্রদান
তরুণদের মানসিক সমস্যা নিরসনে প্রথমেই তাদের পাশে থাকতে হবে এবং তাদের সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তারা যেন নিজের কথা সহজে বলতে পারে, সেই সুযোগ দিতে হবে।
২. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি চালানো জরুরি।
৩. বাধ্যতামূলক ফিজিক্যাল এক্টিভিটি
শারীরিক ব্যায়াম তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম তাদের মনোযোগ বাড়াতে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হয়।
৪. মনোযোগী শুনুন
তরুণদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে তারা নিজেদের সমস্যার কথা সহজেই বলতে পারবে। এতে তারা অনুভব করবে যে তাদের কথা গুরুত্বসহকারে শোনা হচ্ছে এবং তারা সমর্থন পাচ্ছে।
৫. পেশাদার সহায়তা
মানসিক সমস্যাগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে, তাহলে পেশাদার সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সাইকোলজিস্ট, থেরাপিস্ট, এবং কাউন্সেলরদের সাহায্য তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তাদের মানসিক সমস্যা শুরুতেই শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া গেলে তাদের জীবনে সফলতা ও সুখ আসবে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি না হলে সমাজেও এর প্রভাব দেখা দেবে, তাই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের সচেতন করা এবং সহায়তা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।