কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর জন্য তাদের সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং সামাজিক কাঠামোর কারণে কাতারে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি শিশুদের মানসিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। অভিবাসী পরিবারগুলোর অভিজ্ঞতা, স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থা, পারিবারিক সংস্কৃতি এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শিশুদের মানসিক বিকাশের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
কাতারে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি শিশুদের মানসিক চ্যালেঞ্জ
১. সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও আত্মপরিচয়ের সংকট
কাতারে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি শিশুরা একদিকে পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি সংস্কৃতি এবং অন্যদিকে স্থানীয় আরবি ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণে বড় হয়। এ কারণে তারা কখনো কখনো আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগে। পরিবার থেকে বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হলেও স্কুল এবং সামাজিক পরিসরে তারা ভিন্ন এক পরিবেশে বেড়ে ওঠে, যা দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।
২. ভাষাগত সমস্যা ও যোগাযোগের বাধা
কাতারে ইংরেজি এবং আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক। তবে অনেক বাংলাদেশি পরিবারের শিশুরা প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা ভাষার ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকে। ফলে স্কুলে গিয়ে নতুন ভাষা শেখার চাপে মানসিক চাপ অনুভব করতে পারে। একই সঙ্গে, অভিভাবকদের অনেকেই ইংরেজি বা আরবি ভাষায় দুর্বল হওয়ায় সন্তানের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে সমস্যায় পড়েন।
৩. পারিবারিক ও সামাজিক প্রত্যাশার চাপ
বাংলাদেশি পরিবারগুলো সাধারণত শিশুদের ওপর উচ্চ শিক্ষাগত প্রত্যাশা রাখে। অনেক সময় অভিভাবকরা চান, তাদের সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা উচ্চপদস্থ পেশাজীবী হোক। এ ধরনের সামাজিক ও পারিবারিক প্রত্যাশা শিশুদের মানসিক চাপে ফেলে দিতে পারে, যা উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করে।
৪. বন্ধু নির্বাচন ও সামাজিক মেলবন্ধন
বাংলাদেশি শিশুরা স্কুল এবং কমিউনিটি ইভেন্টে বিভিন্ন দেশের শিশুদের সঙ্গে বড় হয়। কিন্তু অনেক সময় তাদের পরিচিত বাংলাদেশি সংস্কৃতির অভাব এবং পারিবারিক বিধিনিষেধের কারণে বন্ধুত্ব তৈরিতে সমস্যা হয়। অন্যদিকে, কিছু শিশু পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারে, যা অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরামর্শ গ্রহণের সংকট
বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা তুলনামূলক কম। শিশুরা যদি মানসিক চাপে থাকে, তাহলে তাদের সহায়তা দেওয়ার পরিবর্তে অনেকে বিষয়টিকে অবহেলা করেন। ফলে অনেক শিশু উদ্বেগ, হতাশা, একাকীত্ব ও আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন হয়।
সমাধানের উপায় ও করণীয়
১. সাংস্কৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা – শিশুদের নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে পরিবারে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে, পাশাপাশি তাদের স্থানীয় সংস্কৃতি গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। 2. মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন নিশ্চিত করা – শিশুদের মানসিক চাপে থাকলে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া দরকার। 3. শিক্ষা ও ভাষাগত উন্নয়ন – শিশুদের আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে হবে, যাতে তারা স্কুল ও সামাজিক জীবনে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে। 4. পারিবারিক সংযোগ দৃঢ় করা – বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে বিশ্বাস ও বোঝাপড়া বাড়াতে নিয়মিত পরিবারভিত্তিক কার্যক্রম ও সংলাপ চালু করা জরুরি। 5. সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করা – বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি অন্যান্য অভিবাসী পরিবারগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা শিশুদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিন
যদি আপনার সন্তান মানসিক চাপে থাকে এবং আপনি পেশাদার সহায়তা চান, তাহলে আপনি অনলাইনে নিরাপদ ও গোপনীয় মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। আমার সাথে যোগাযোগ করুন: rajuakon.com/contact ।