মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মাসিক বা ঋতুস্রাব (Period)। সাধারণত, ১০-১৬ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়, যা মেনার্কি (Menarche) নামে পরিচিত। মাসিকের আগে ও সময়কালীন শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক হলেও অনেক মেয়ে ও তাদের পরিবার এ নিয়ে সচেতন নয়।
এই ব্লগে আমরা মেয়েদের মাসিক হওয়ার লক্ষণ, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, এবং প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মাসিক শুরু হওয়ার সাধারণ লক্ষণ
মাসিক হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই শরীরে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। এসব লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে।
১. পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি
মাসিকের আগে তলপেটে হালকা বা মাঝারি ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা ক্র্যাম্প (Cramps) নামে পরিচিত। এটি সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার এক-দুই দিন আগে থেকে শুরু হয় এবং প্রথম কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
২. স্তনে সংবেদনশীলতা বা ব্যথা
মাসিকের আগে স্তন ফুলে যেতে পারে এবং স্পর্শকাতর হয়ে পড়তে পারে। এটি হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয় এবং মাসিক শুরু হওয়ার পর স্বাভাবিক হয়ে যায়।
3. ত্বকের পরিবর্তন (ব্রণ বা পিম্পল ওঠা)
মাসিকের আগে হরমোনের ওঠানামার কারণে ত্বকে ব্রণ (Acne) দেখা যেতে পারে। এটি অনেক মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ লক্ষণ।
৪. মাথাব্যথা ও ক্লান্তি
অনেক মেয়ে মাসিক শুরুর আগে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার মাথাব্যথা অনুভব করতে পারে। এছাড়া শরীর দুর্বল লাগতে পারে এবং ঘুম বেশি পেতে পারে।
৫. খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা অরুচি
কিছু মেয়েরা মাসিকের আগে মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে, আবার কেউ কেউ স্বাভাবিকের তুলনায় কম খেতে পারে।
৬. মেজাজের পরিবর্তন ও আবেগপ্রবণতা
মাসিকের আগে মেয়েদের মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। এটি প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) নামে পরিচিত।
৭. পেটে ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা
মাসিকের আগে অনেক মেয়ে পেটে গ্যাস, ফোলাভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা অনুভব করে।
৮. সাদা বা হালকা হলুদ স্রাব (Vaginal Discharge)
মাসিক শুরুর আগে প্রস্রাবের রাস্তা থেকে সাদা বা হালকা হলুদ রঙের স্রাব নির্গত হতে পারে। এটি সাধারণত শরীরকে মাসিকের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
প্রস্তুতি ও করণীয়
✅ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা উচিত এবং প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা পর পরিবর্তন করা উচিত।
✅ পর্যাপ্ত পানি পান করা
মাসিকের আগে ও পরে প্রচুর পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা ও মাথাব্যথা কমে।
✅ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
মাসিকের আগে ও পরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেলে ব্যথা ও ক্লান্তি কমে।
✅ হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম করা
হালকা হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করলে পেটের ব্যথা ও মেজাজের পরিবর্তন কমে।
✅ গরম সেঁক নেওয়া
পেটে বা পিঠে গরম পানির ব্যাগ বা হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে সেঁক দিলে মাসিকের ক্র্যাম্প থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়।
✅ মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া
মাসিকের সময় মানসিক চাপ কমানোর জন্য পছন্দের কাজ করা, গান শোনা, মেডিটেশন করা উপকারী হতে পারে।
মাসিক শুরু হওয়ার পর করণীয়
👉 পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
👉 পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান।
👉 হালকা ব্যায়াম করুন।
👉 পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
👉 যদি মাসিক অনিয়মিত হয় বা অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
মেয়েদের মাসিক হওয়ার আগে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক। তবে, মাসিকের সময় কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকা জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে মাসিকজনিত অস্বস্তি কমানো সম্ভব। যদি মাসিক সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
