মাসিকের সময় মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। পেটে ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন, ক্লান্তি, এবং হরমোনের ওঠানামার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পুষ্টিকর খাবার শরীরে শক্তি প্রদান করে এবং মাসিকের সময় অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
মাসিকের সময় কী খাওয়া উচিত?
১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: মাসিকের সময় শরীরে রক্তক্ষরণের কারণে আয়রনের অভাব হতে পারে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি কমে।
২. ফাইবারযুক্ত খাবার: ফাইবারযুক্ত খাবার হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- শাকসবজি (ব্রকলি, পালং শাক)
- গোটা শস্য (ওটস, বাদামি চাল)
- ফলমূল (আপেল, নাশপাতি)
৩. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: ম্যাগনেসিয়াম পেশির সংকোচন কমায় এবং মাসিকের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
- বাদাম (কাজু, কাঠবাদাম)
- বীজ (সাদা তিল, সুর্যমুখী বীজ)
- চকলেট (ডার্ক চকলেট)
৪. পানি ও জলীয় খাবার: মাসিকের সময় শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি।
- শশা, তরমুজ, কমলালেবু
- নারকেল পানি
৫. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- কমলালেবু, লেবু, স্ট্রবেরি
- ব্রকলি, কাঁচা মরিচ
মাসিকের সময় কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
১. প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার: লবণ পানির পরিমাণ শরীরে বাড়িয়ে দেয় এবং ফুলে যাওয়া অনুভূতি তৈরি করে, যা অস্বস্তিকর হতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস (চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই)
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার (প্যাকেটজাত খাবার)
২. চিনি সমৃদ্ধ খাবার: অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার ওঠানামা সৃষ্টি করতে পারে এবং মেজাজ পরিবর্তন ও ক্লান্তি বাড়ায়।
- মিষ্টি পানীয়, সোডা
- মিষ্টি খাবার (পেস্ট্রি, কেক)
৩. ক্যাফেইন: ক্যাফেইন পেশির সংকোচন বাড়ায়, যা মাসিকের ব্যথা বাড়াতে পারে।
- কফি, চা, এনার্জি ড্রিঙ্ক
- চকোলেট
৪. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের প্রদাহ বাড়ায় এবং মাসিকের ব্যথা বাড়াতে পারে।
- ভাজা খাবার (ফাস্ট ফুড)
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার
৫. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল শরীরের পানিশূন্যতা বাড়ায় এবং মেজাজ পরিবর্তন বা উদ্বেগের সমস্যা বাড়াতে পারে।
- মদ, বিয়ার, হুইস্কি
মাসিকের সময় আরাম পেতে খাদ্যাভ্যাসের টিপস:
- ছোট ছোট খাবার খান এবং পেট খালি রাখবেন না।
- প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- ভাজাপোড়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খান।
- মাসিকের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হলে চা, বিশেষ করে আদা বা পুদিনা চা পান করতে পারেন।
মাসিকের সময় খাদ্য তালিকা সঠিকভাবে মেনে চললে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মাসিকের সময়ের অস্বস্তি কমে। আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফাইবারযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং লবণ, চিনি, ক্যাফেইন, এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। সঠিক খাবার নির্বাচন করে মাসিকের সময় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।