রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু যারা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদের জন্য রোজা রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎরোগ ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের জন্য রোজার সময় সঠিক রোগ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। তবে, কিছু নিয়ম মেনে চললে রমজানে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে রোজা রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানে করণীয়
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। রোজার সময় দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করা হঠাৎ করে কমে যেতে পারে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), আবার ইফতারের পর বেশি খাওয়ার কারণে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
১. ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
রোজা রাখার আগে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তারা আপনার ওষুধের মাত্রা, ইনসুলিনের প্রয়োগ বা অন্যান্য চিকিৎসার পরিবর্তন সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
২. সাহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাদ্য:
সাহরির সময় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত, যেমন শাকসবজি, বাদাম, ওটস, এবং দই। এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় রক্তে শর্করা স্থিতিশীল রাখে। ইফতারের সময় বেশি চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন এবং ফল, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে চেষ্টা করুন।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
ডায়াবেটিস রোগীদের পানিশূন্যতার ঝুঁকি থাকে, তাই ইফতার থেকে সাহরির মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি কফি, চা বা সোডার মতো পানীয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ সেগুলো শরীরের পানি শোষণ করতে পারে।
৪. রক্তে শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করুন:
রমজানে রক্তের শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৫. ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম:
ডায়াবেটিস রোগীদের হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে, তবে বেশি শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর হালকা হাঁটা করা ভালো একটি উপায়।
অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ব্যবস্থাপনা
১. উচ্চ রক্তচাপ:
যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য রোজার সময় ওষুধের মাত্রা ও সময় নির্ধারণ করা জরুরি। সাহরি ও ইফতারের সময় স্বাস্থ্যকর ও কম লবণযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। অধিক লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, তাই লবণাক্ত খাবার যেমন আচার, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
২. হৃদরোগ:
হৃদরোগীরা রোজার সময় বিশেষভাবে সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। বেশি তেলে ভাজা, চর্বিযুক্ত ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। খাবারে বেশি ফল, শাকসবজি ও লো-ফ্যাট প্রোটিন রাখতে হবে।
৩. অ্যাজমা বা হাঁপানি:
হাঁপানি রোগীদের জন্য রোজার সময় নিয়মিত ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। রোজার সময়ে ধুলোবালি বা ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা এবং পরিবেশগত উপাদান থেকে রক্ষা পাওয়া জরুরি।
৪. কিডনির রোগ:
কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। রোজার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং কিডনির যেসব ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলোর ডোজ সঠিকভাবে মেনে চলা জরুরি।
রোজার সময় কিছু সাধারণ টিপস
- ওষুধের সঠিক সময় মেনে চলুন: সাহরি ও ইফতারের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ডোজ এবং সময় মেনে চলুন।
- খাদ্যের ভারসাম্য রক্ষা করুন: অতিরিক্ত মিষ্টি, তেলযুক্ত এবং ভারী খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- যথেষ্ট বিশ্রাম নিন: শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে বেশি বিশ্রাম নিন। সাহরি ও ইফতারের মাঝে শরীরকে হালকা রাখার চেষ্টা করুন।
উপসংহার
ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের জন্য রমজানে রোজা রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং নিয়মিত শারীরিক যত্নের মাধ্যমে রোজা পালন করা সম্ভব। রোগী হিসেবে রোজার সময় নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.