কিডনি রোগীদের খাবার বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাস কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং রোগের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। দুধ, যদিও একটি পুষ্টিকর খাবার, কিডনি রোগীদের জন্য সবসময় সেরা পছন্দ নয়। এটি কিডনির অবস্থার ওপর নির্ভর করে যে তারা দুধ খেতে পারবেন কি না।
কিডনি রোগে দুধ কেন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?
দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফসফরাস, এবং পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনি সমস্যার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে:
১. প্রোটিনের মাত্রা বেশি হওয়া:
- দুধে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
- প্রোটিন ভেঙে যাওয়ার সময় বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়, যা কিডনি দিয়ে বের করতে হয়।
২. ফসফরাসের উচ্চমাত্রা:
- দুধে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি, যা কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
- ফসফরাস বেশি হলে হাড় দুর্বল হতে পারে এবং ক্যালসিয়াম-ফসফরাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৩. পটাশিয়ামের উপস্থিতি:
- কিডনি রোগীরা সাধারণত পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যায় পড়েন।
- পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কিডনি রোগীর জন্য দুধের বিকল্প
যদি দুধ সেবন করতে হয়, তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
১. কম ফসফরাস ও কম পটাশিয়ামযুক্ত দুধ বেছে নিন:
- বিশেষ ধরনের দুধ যেমন লো-ফসফরাস বা লো-পটাশিয়াম দুধ খুঁজে নিন।
- ডাক্তারের পরামর্শে দুধের পরিমাণ সীমিত করুন।
২. উদ্ভিজ্জ দুধ:
- সয়া দুধ, বাদাম দুধ বা নারকেল দুধ অনেক ক্ষেত্রে কিডনি রোগীদের জন্য ভালো বিকল্প। তবে এগুলোর পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
৩. দুধের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ:
- যদি চিকিৎসক অনুমতি দেন, তবে দৈনিক ১ কাপের বেশি দুধ না খাওয়াই ভালো।
কিডনি রোগীর জন্য খাদ্য সম্পর্কে সাধারণ নির্দেশনা
কিডনি রোগীদের খাবারের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
১. প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করুন:
- অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মেপে প্রোটিন গ্রহণ করুন।
২. ফসফরাস ও পটাশিয়াম এড়িয়ে চলুন:
- দুধ, চিজ, চকলেট এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
- প্রচুর শাকসবজি বা ফলমূল খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৩. লবণের পরিমাণ কমান:
- কিডনি রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবণ কম খাওয়া জরুরি।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
- কিডনি রোগের ধরণ অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ ঠিক করতে হবে।
দুধ সেবনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন
কিডনি রোগীদের খাদ্যাভ্যাস ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই:
- দুধ বা অন্য কোনো খাদ্য গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- কিডনি রোগের স্টেজ এবং রক্তে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করা উচিত।
উপসংহার
কিডনি রোগীদের দুধ খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও এটি কিডনির কার্যক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক পরামর্শ এবং নিয়ম মেনে খাওয়া হলে দুধের উপকারিতা উপভোগ করা সম্ভব।
পরামর্শ:
আপনার কিডনির অবস্থান এবং রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং খাবারের তালিকা তৈরি করুন।
