Hypochondriasis, যাকে ইলনেস অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডারও বলা হয়, এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি নিজেকে একটি গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, যদিও শারীরিকভাবে সে সুস্থ থাকতে পারে। এই অবস্থা জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা Hypochondriasis-এর কারণ, লক্ষণ, এবং সিবিটি (Cognitive Behavioral Therapy) থেরাপির কিছু কার্যকরী সেলফ-হেল্প টেকনিক নিয়ে আলোচনা করব যা নিজের উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে।
Hypochondriasis এর কারণসমূহ
Hypochondriasis-এর কারণগুলো জটিল এবং ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ Hypochondriasis-এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অতিরিক্ত সচেতনতা এবং নিজের শরীরের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া।
- পরিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কারো মধ্যে Hypochondriasis থাকলে ব্যক্তির মধ্যে এই অবস্থা বিকাশের সম্ভাবনা বেশি।
- গুরুতর অসুস্থতার ইতিহাস: পূর্বে গুরুতর অসুস্থতায় ভোগা মানুষদের মধ্যে Hypochondriasis-এর ঝুঁকি বেশি।
- আবেগপ্রবণতা: ব্যক্তির অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা বা অস্থির মনোভাবও Hypochondriasis-এর একটি কারণ হতে পারে।
Hypochondriasis এর লক্ষণসমূহ
Hypochondriasis-এর কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
- অতিরিক্ত উদ্বেগ: নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে অস্বাভাবিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকা।
- ঘন ঘন ডাক্তার দেখানো: বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ঘন ঘন ডাক্তার দেখানো এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো।
- শারীরিক লক্ষণগুলোর ভুল ব্যাখ্যা: স্বাভাবিক শারীরিক লক্ষণগুলোকে গুরুতর রোগের লক্ষণ হিসেবে মনে করা।
- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য খোঁজা: ইন্টারনেট বা বইয়ের মাধ্যমে অসুস্থতা সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় তথ্য খোঁজা।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণে ব্যক্তির সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে প্রভাব পড়া।
Hypochondriasis এর জন্য সিবিটি থেরাপির সেলফ-হেল্প টেকনিক
১. কগনিটিভ রিফ্রেমিং (Cognitive Restructuring)
- কীভাবে কাজ করে: নেতিবাচক এবং অযৌক্তিক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে বাস্তবতার আলোকে পুনর্বিবেচনা করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: যখন আপনি মনে করেন যে আপনি গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন, তখন নিজের চিন্তাগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখুন। মনের মধ্যে যে চিন্তাগুলো আসে, সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং বিকল্প, ইতিবাচক চিন্তা করুন।
২. মেডিকেল টেস্ট সীমাবদ্ধ করা (Limiting Medical Tests)
- কীভাবে কাজ করে: অতিরিক্ত মেডিকেল পরীক্ষা থেকে বিরত থাকা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে ঘন ঘন ডাক্তার দেখানো এবং পরীক্ষা করানো কেবল উদ্বেগ বাড়াবে। প্রয়োজন ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা এড়িয়ে চলুন।
৩. মনোযোগ স্থানান্তর (Shifting Focus)
- কীভাবে কাজ করে: স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চিন্তাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য কাজে মনোনিবেশ করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: যখন আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ হয়, তখন নিজের মনোযোগ অন্য কোনও কাজে স্থানান্তর করুন, যেমন পছন্দের শখের কাজ বা শারীরিক ব্যায়াম।
৪. ধৈর্য ধরার অনুশীলন (Practicing Patience)
- কীভাবে কাজ করে: উদ্বেগ এবং চাপের সময়ে নিজেকে ধৈর্য ধরার জন্য প্রস্তুত করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: যখন আপনি উদ্বিগ্ন বোধ করেন, তখন গভীর শ্বাস নিন এবং নিজেকে সময় দিন। নিজের মনের স্থিতি ফিরে পাওয়ার জন্য কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করুন।
৫. ইমোশনাল রেগুলেশন (Emotional Regulation)
- কীভাবে কাজ করে: আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উদ্বেগ কমানো।
- নিজের উপর প্রয়োগ: আবেগের তীব্রতা কমানোর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা ধ্যান করুন। আপনার মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৬. সোশ্যাল সাপোর্ট গ্রহণ (Seeking Social Support)
- কীভাবে কাজ করে: বন্ধু, পরিবার, বা সমর্থনকারী গোষ্ঠীর সাথে আপনার উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: আপনার স্বাস্থ্য উদ্বেগ নিয়ে বিশ্বাসী বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন। তাদের পরামর্শ এবং সমর্থন গ্রহণ করুন।
উপসংহার
Hypochondriasis একটি মানসিক অবস্থা যা জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তবে সঠিক কৌশল এবং সিবিটি থেরাপির মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা সম্ভব। সঠিক সেলফ-হেল্প টেকনিক ব্যবহার করে আপনি নিজের উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারবেন। নিজের মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে Hypochondriasis-এর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।