ধাতু ক্ষয় (Metal Corrosion) হলো একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন পরিবেশগত এবং রাসায়নিক কারণে ঘটে। এটি ধাতুর স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বা কাঠামোর ক্ষতি করতে পারে। এই ক্ষয় প্রক্রিয়া দ্রুত শনাক্ত করা গেলে উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
ধাতু ক্ষয়ের লক্ষণ
১. রঙ পরিবর্তন
- ধাতুর উপর লালচে বা বাদামি রঙের স্তর দেখা দিলে তা লোহার মরিচা (Rust) হতে পারে।
- তামা বা ব্রোঞ্জের ক্ষেত্রে সবুজাভ স্তর গঠিত হয় (Patina)।
২. পৃষ্ঠের অমসৃণতা ও ছিদ্র
- ধাতুর পৃষ্ঠে ছোট ছোট গর্ত বা ফাটল দেখা যায়।
- এটি সাধারণত ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ক্ষয়ের কারণে ঘটে।
৩. শক্তি ও স্থায়িত্ব কমে যাওয়া
- ধাতুর স্থায়িত্ব কমে গিয়ে সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
- যান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. ধাতুর ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি
- লম্বা সময় ক্ষয় চলতে থাকলে ধাতু সহজেই ভাঙতে পারে।
- শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে এটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৫. বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা পরিবর্তন
- ধাতুর উপর মরিচা বা অক্সাইড স্তর পড়লে বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা কমে যায়।
- ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ধাতু ক্ষয়ের কারণ
১. আর্দ্রতা ও পানি
- বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে ধাতু দ্রুত মরিচা পড়ে।
- সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ধাতুর ক্ষয় ত্বরান্বিত করে।
২. রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া
- অ্যাসিড বা ক্ষারীয় পদার্থ ধাতুর সাথে প্রতিক্রিয়া করে ক্ষয় ঘটায়।
- শিল্প এলাকার বায়ুদূষণ ধাতুর ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়।

৩. বৈদ্যুতিক ও ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ক্ষয়
- দুটি ভিন্ন ধাতু একসাথে সংযুক্ত থাকলে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ক্ষয় হতে পারে।
- এটি সাধারণত ব্যাটারি বা বৈদ্যুতিক সংযোগে দেখা যায়।
৪. যান্ত্রিক ঘর্ষণ ও চাপ
- বারবার ঘর্ষণ বা যান্ত্রিক চাপ ধাতুর ক্ষয় বৃদ্ধি করে।
- শিল্প মেশিন বা যানবাহনের ধাতুর ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ধাতু ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়
১. প্রতিরক্ষামূলক আবরণ ব্যবহার
- ধাতুর উপর পেইন্ট, ল্যাকার বা প্লাস্টিক আবরণ দিলে ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
- গ্যালভানাইজড লেপ (Galvanization) লোহার জন্য কার্যকর।
২. নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ
- ধাতুর পৃষ্ঠ পরিষ্কার রাখা এবং আর্দ্রতা মুক্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- যন্ত্রপাতি ও কাঠামোর ক্ষয় শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত।
৩. ক্ষয়-প্রতিরোধী ধাতু ব্যবহার
- স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, ব্রোঞ্জের মতো ধাতু ক্ষয় প্রতিরোধী।
- বিশেষ করে সামুদ্রিক পরিবেশে ব্যবহারের জন্য এসব ধাতু কার্যকর।
৪. ক্যাথোডিক প্রটেকশন (Cathodic Protection)
- বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ধাতুর ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
- এটি সাধারণত পাইপলাইন, জাহাজ ও পানির ট্যাংকের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৫. রাসায়নিক প্রতিরোধক ব্যবহার
- ধাতুর উপর বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হয়।
- এটি বিশেষত শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
ধাতু ক্ষয়ের লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করা গেলে তা প্রতিরোধ করা সহজ হয়। সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ও কাঠামোর স্থায়িত্ব বাড়ানো সম্ভব। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধাতুর ক্ষয় রোধ করা যায়।