প্রেগনেন্ট কিভাবে হয়

গর্ভধারণ বা প্রেগন্যান্সি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা একজন নারীর ডিম্বাণু এবং একজন পুরুষের শুক্রাণুর মিলিত হওয়ার মাধ্যমে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ রয়েছে, যার প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা থাকা প্রয়োজন, কারণ এটি প্রজনন ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আরও ভালো ধারণা দেয়।

গর্ভধারণের ধাপসমূহ

১. ডিম্বপাত (Ovulation)

প্রতিটি মাসে একজন নারীর ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু মুক্ত হয়, যা ডিম্বপাত নামে পরিচিত। সাধারণত, মাসিক চক্রের মাঝামাঝি সময়ে (মাসিক শুরু হওয়ার প্রায় ১০-১৬ দিন পরে) এই প্রক্রিয়া ঘটে। ডিম্বাণুটি ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়ে নারীর ডিম্বনালীতে যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. নিষেক (Fertilization)

যদি ডিম্বপাতের সময় একজন নারী যৌন মিলনে লিপ্ত হন এবং পুরুষের শুক্রাণু নারীর শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে শুক্রাণু ডিম্বনালীতে থাকা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়। এই মিলন প্রক্রিয়াকে নিষেক বলা হয়। শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু তৈরি করে, যা জাইগোট নামে পরিচিত।

৩. নিষিক্ত ডিম্বাণুর বিভাজন

নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভাজনের মাধ্যমে আরও ছোট ছোট কোষে বিভক্ত হতে থাকে। এটি ডিম্বনালী দিয়ে চলতে থাকে এবং অবশেষে গর্ভাশয়ে পৌঁছে। এই সময়কালে নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভাজিত হয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করে, যা ব্লাস্টোসিস্ট নামে পরিচিত।

৪. গর্ভাশয়ে স্থাপন (Implantation)

নিষিক্ত ডিম্বাণু গর্ভাশয়ে পৌঁছে এবং গর্ভাশয়ের দেয়ালে স্থাপন করে। এটি গর্ভধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ব্লাস্টোসিস্ট গর্ভাশয়ের দেয়ালের সাথে সংযুক্ত হয়ে সেখানে বড় হতে শুরু করে। এ সময় হরমোন নিঃসরণ হয়, যা গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখা দেয়ার জন্য দায়ী।

৫. গর্ভাবস্থার লক্ষণ

গর্ভধারণের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:

  • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • বমি বমি ভাব (মর্নিং সিকনেস)
  • স্তন ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা
  • মেজাজের পরিবর্তন

গর্ভধারণের সময় স্বাস্থ্য পরামর্শ

১. পুষ্টিকর খাদ্য: গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এতে গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

২. প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা: গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।

৩. বুকের দুধের প্রস্তুতি: গর্ভধারণকালে শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত যাতে প্রসবের পর সন্তানকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো যায়।

গর্ভধারণ সম্পর্কিত ভুল ধারণা

অনেক সময় গর্ভধারণ সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল ধারণা তৈরি হয়। যেমন, যৌন মিলন ছাড়াও গর্ভধারণ সম্ভব এমন কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। তবে, প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণ শুধুমাত্র ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনেই সম্ভব। এছাড়াও অনেক মহিলার ধারণা থাকে যে, মাসিকের সময় যৌন মিলনে গর্ভধারণ হবে না, যা সঠিক নয়। মাসিকের সময়েও গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

উপসংহার

গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের মাধ্যমে ঘটে। এটি নারী ও পুরুষের যৌন মিলনের একটি প্রাকৃতিক ফলাফল। সঠিক তথ্য জেনে এবং সচেতন থেকে গর্ভধারণ সম্পর্কে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top