সন্তান জন্মের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমানোর বিষয়টি বেশ স্বাভাবিক একটি প্রথা। তবে সন্তান কত বছর বয়স পর্যন্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানো উচিত, তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক উন্নতির ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এই ব্লগে আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং সঠিক সময় কখন সন্তানকে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর জন্য উৎসাহিত করতে হবে সে সম্পর্কে মতামত দেবো।
১. শুরুতে একসাথে ঘুমানো স্বাভাবিক
শিশু জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস বা বছর, শিশুর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বাবা-মা তাদের সঙ্গেই সন্তানকে ঘুমাতে দিতে পারেন। এটি সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী মানসিক বন্ধন গড়ে তোলে। এছাড়া এই সময়ে শিশুকে সহজেই খাওয়ানো, আরাম দেওয়া এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে নবজাতক বা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় না ঘুমিয়ে, একই ঘরে আলাদা বিছানায় ঘুমানো শ্রেয়। এর ফলে শিশুর শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়, কারণ একসঙ্গে একই বিছানায় ঘুমালে শিশুর জন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে।
২. শিশুর মানসিক উন্নয়ন
যখন শিশু একটু বড় হয়, সাধারণত ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে, তাদের স্বাধীনভাবে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এই বয়সে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে তাদের চারপাশের পরিবেশ এবং স্বাধীনতার ধারণা সম্পর্কে জানতে শুরু করে। যদি এই বয়সেও বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানো চলতে থাকে, তাহলে তাদের মানসিক বিকাশে বাধা আসতে পারে এবং তাদের স্বাধীনতা বোধ গড়ে উঠতে দেরি হতে পারে।
৩. ৪-৫ বছর বয়স: আলাদা ঘুমানোর জন্য সঠিক সময়
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে শিশুকে বাবা-মায়ের থেকে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এই সময়ে শিশুরা সাধারণত স্কুলে যায়, এবং ধীরে ধীরে তাদের দৈনন্দিন রুটিনে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। আলাদা ঘুমানোর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং একা থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে, যা তাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. স্বাধীনতা এবং সুরক্ষা
শিশুদের আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস তাদের স্বাধীনতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে এর সঙ্গে সুরক্ষার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। শিশুকে এমন একটি ঘরে বা বিছানায় ঘুমাতে দেওয়া উচিত, যা তাদের জন্য নিরাপদ। এসময় ঘরের পরিবেশও আরামদায়ক এবং নিরাপদ হওয়া জরুরি, যেন তারা রাতে ঘুমাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
৫. আবেগীয় সংযোগ বজায় রাখা
আলাদা ঘুমানোর মানে এই নয় যে বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে আবেগীয় দূরত্ব আসবে। বরং এটি একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন, যা তাদের স্বাধীনতা গড়ে তোলে। বাবা-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং ভালোবাসা দেখানো, যেন তারা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সক্ষম হয়।
৬. কখন পেশাদার সাহায্য নেবেন?
কিছু শিশু আছেন যারা বাবা-মায়ের থেকে আলাদা ঘুমাতে খুব অস্বস্তি বোধ করে বা ভয় পায়। যদি সন্তান দীর্ঘ সময় ধরে একা ঘুমাতে অস্বস্তি বোধ করে এবং এতে তার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ে, তাহলে পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
শিশুর মানসিক ও শারীরিক উন্নয়নে ঘুমের পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, যা তার স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। সাধারণত ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে বাবা-মায়ের থেকে আলাদা ঘুমানো শুরু করা শ্রেয়, তবে প্রতিটি শিশুর ভিন্ন চাহিদা থাকতে পারে। বাবা-মা হিসেবে শিশুর নিরাপত্তা, আরাম এবং আবেগীয় সংযোগ বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।