ইমার্জেন্সি পিল একটি অস্থায়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি যা অসুরক্ষিত সহবাসের পরে গর্ভধারণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় সঠিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করা বা গর্ভনিরোধকের ব্যর্থতার কারণে ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণ করতে হয়। তবে এই পিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রহণ করতে হয় যাতে এটি কার্যকর হয়।
ইমার্জেন্সি পিল কী?
ইমার্জেন্সি পিল, যাকে “মর্নিং আফটার পিল” হিসেবেও ডাকা হয়, এমন একটি ওষুধ যা যৌন সম্পর্কের পরে গর্ভধারণ প্রতিরোধে সহায়ক। এই পিল মূলত প্রোজেস্টেরন হরমোনের উচ্চমাত্রা থাকে, যা ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ এবং জরায়ুতে প্রতিস্থাপন হতে বাধা দেয়। বাজারে ইমার্জেন্সি পিলের কিছু প্রচলিত ব্র্যান্ড রয়েছে, যেমন: নরলেভো, পোষ্টিনর-২, প্রিমলুট-এন ইত্যাদি।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার সময়সীমা
সহবাসের পরে ইমার্জেন্সি পিল যত দ্রুত সম্ভব খাওয়া উচিত। সাধারণত পিলের কার্যকারিতা নির্ভর করে এর গ্রহণের সময়সীমার ওপর। ইমার্জেন্সি পিল দুটি প্রধান টাইমলাইন অনুসারে কার্যকর:
- ৭২ ঘণ্টার মধ্যে: বেশিরভাগ ইমার্জেন্সি পিল প্রথম ৭২ ঘণ্টার (৩ দিনের) মধ্যে খেলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। এর মধ্যে যত দ্রুত পিল খাওয়া যায়, তত ভালো কাজ করবে। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা প্রায় ৯৫% থাকে, যা সময়ের সাথে ধীরে ধীরে কমে আসে।
- ১২০ ঘণ্টার মধ্যে: কিছু ইমার্জেন্সি পিল ১২০ ঘণ্টা (৫ দিন) পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে, তবে সময়ের সাথে এর কার্যকারিতা কমে যায়। যেমন- এলা (Ella) নামের ইমার্জেন্সি পিল ১২০ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর থাকে।
ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা
ইমার্জেন্সি পিলের কার্যকারিতা মূলত নির্ভর করে এটি কত দ্রুত খাওয়া হয় তার ওপর। সাধারণত প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি হয়। তবে পিল খাওয়ার সময়সীমা অতিক্রম করলে গর্ভধারণ প্রতিরোধের সম্ভাবনা কমে যায়।
- প্রথম ২৪ ঘণ্টা: কার্যকারিতা প্রায় ৯৫%
- ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত: কার্যকারিতা প্রায় ৮৫%
- ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত: কার্যকারিতা প্রায় ৫৮-৬০%
ইমার্জেন্সি পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইমার্জেন্সি পিল সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন:
- মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব বা বমি
- স্তনের সংবেদনশীলতা
- ক্লান্তি
- পিরিয়ডের সময় পরিবর্তন (দ্রুত বা বিলম্বিত হতে পারে)
যদি পিল গ্রহণের পরে বমি হয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব আবার পিল খাওয়া উচিত।
ইমার্জেন্সি পিলের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার
ইমার্জেন্সি পিল একটি অস্থায়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি, যা নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি কোনো নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতির বিকল্প নয়। ইমার্জেন্সি পিল প্রায়শই খেলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, দীর্ঘমেয়াদী গর্ভনিরোধের জন্য নিয়মিত পদ্ধতি যেমন কনডম, পিল, বা আইইউডি ব্যবহার করা উচিত।
সহবাসের পরে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার জন্য সময়সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি খেলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়, তবে সর্বোচ্চ ৭২ থেকে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এটি কাজ করতে পারে। তবে এটি নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতির বিকল্প নয়, এবং দীর্ঘমেয়াদে সঠিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো গর্ভনিরোধক ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।