ডেঙ্গু জ্বর হলো মশার মাধ্যমে ছড়ানো এক ধরণের ভাইরাল ইনফেকশন যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এটি প্রধানত চারটি ভিন্ন ভাইরাসের কারণে হতে পারে এবং বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা এবং ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ নিয়ে আসে। ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল বিভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত এটি স্থায়ী হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের পর্যায়
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়:
১. ফিব্রাইল পর্যায় (Fever Phase)
এই পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বর শুরু হয় এবং ২-৭ দিন স্থায়ী হতে পারে। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- তীব্র জ্বর (১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পেছনে ব্যথা
- পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (তাই একে “ব্রেকবোন ফিভার”ও বলা হয়)
- শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়

২. ক্রিটিক্যাল পর্যায় (Critical Phase)
ফিব্রাইল পর্যায়ের পর প্রায় ২৪-৪৮ ঘণ্টার ক্রিটিক্যাল সময়কাল আসে। এই সময়ে দেহের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে এটি একটি বিপজ্জনক সময় হতে পারে, কারণ এ সময় রক্তচাপ কমে যেতে পারে বা রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পর্যায়ে রোগীর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন, যাতে শক সিন্ড্রোম বা রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা দেখা না দেয়।
৩. রিকভারি পর্যায় (Recovery Phase)
ডেঙ্গু জ্বরের তৃতীয় পর্যায়টি হলো রিকভারি পর্যায়। এটি ক্রিটিক্যাল পর্যায়ের পর শুরু হয় এবং ২-৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। এই পর্যায়ে রোগীর অবস্থা উন্নতি করতে শুরু করে, দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয় এবং ধীরে ধীরে রক্তচাপ ও প্লাটিলেট সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।
ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল
সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসার সময়কাল বেড়ে যেতে পারে। সুস্থ হয়ে উঠলেও শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি আরও কিছুদিন থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। মূলত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর তরল পান করা এবং ব্যথা বা জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ (যেমন আইবুপ্রোফেন) ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই এগুলো গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ জন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
- মশারি ব্যবহার করা
- মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা
- মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা (যেমন জমে থাকা পানি)
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৭-১০ দিন স্থায়ী হয় এবং এর উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে। তবে ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে রোগীর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন, কারণ এই সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক যত্ন নিলে ডেঙ্গু থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।