ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর হলো এক প্রকারের ভাইরাল ইনফেকশন যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলত চারটি ভিন্ন ভাইরাসের কারণে হতে পারে এবং সাধারণত উপসর্গ হিসেবে জ্বর, শরীরের ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরের স্থায়িত্ব নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়ার উপর। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর ৭-১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের পর্যায়সমূহ

১. ফিব্রাইল পর্যায় (Fever Phase)

এই পর্যায়টি ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যে রোগীর তীব্র জ্বর (১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে, সঙ্গে থাকতে পারে:

  • তীব্র মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • পেশি ও অস্থিসন্ধির ব্যথা
  • ফুসকুড়ি এবং দুর্বলতা

    raju akon youtube channel subscribtion

২. ক্রিটিক্যাল পর্যায় (Critical Phase)

এই পর্যায়টি ফিব্রাইল পর্যায়ের পরে আসে এবং এটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ে দেহের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে, কিন্তু প্লাটিলেটের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমে যায় এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এই সময় রোগীর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।

৩. রিকভারি পর্যায় (Recovery Phase)

ক্রিটিক্যাল পর্যায়ের পরে রোগীর তাপমাত্রা আবার বাড়ে এবং ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। এই পর্যায়ে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই পর্যায়টি ২-৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে যদি সঠিক চিকিৎসা পাওয়া না যায়, তাহলে জটিলতা বাড়তে পারে এবং সুস্থ হতে সময় বেশি লাগতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর পরেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  • তীব্র জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
  • ত্বকে ফুসকুড়ি
  • বমি বা বমির ভাব
  • চোখের পেছনে ব্যথা

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। সাধারণত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া হয় এবং রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলা হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং তরল গ্রহণ ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়ক। তবে এন্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ (যেমন আইবুপ্রোফেন) নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, তাই তা পরিহার করা উচিত।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার
  • মশা প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার
  • আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা, যাতে মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top