কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা: সহজ উপায়ে আরোগ্য লাভ করুন

কান পাকা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মূলত সংক্রমণের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের ফলে হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা, কানে পুঁজ বের হওয়া, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এবং চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। যদিও মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কান পাকা রোগের কারণ

  • ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণ – অপরিষ্কার পানি কানে প্রবেশ করলে সংক্রমণ হতে পারে।
  • অ্যালার্জি বা ঠান্ডা – শ্লেষ্মা জমে কান পেকে যেতে পারে।
  • পর্যাপ্ত যত্নের অভাব – কান অপরিষ্কার থাকলে বা কটন বাড বেশি ব্যবহারের ফলে সংক্রমণ হতে পারে।
  • কানে আঘাত – বেশি খোঁচাখুঁচি করলে কানের ভেতরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

১. রসুনের তেল ব্যবহার

রসুনে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর। ব্যবহার:

  • রসুনের কয়েকটি কোয়া তেলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন।
  • ২-৩ ফোঁটা তেল আক্রান্ত কানে ফেলুন।

    raju akon youtube channel subscribtion

২. পেঁয়াজের রস

পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদান ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। ব্যবহার:

  • পেঁয়াজের রস বের করে হালকা গরম করুন।
  • কানে ২ ফোঁটা রস দিন এবং কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার করুন।

৩. তুলসী পাতার রস

তুলসী পাতা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ব্যবহার:

  • কয়েকটি তুলসী পাতা পিষে রস বের করুন।
  • ২ ফোঁটা রস আক্রান্ত কানে দিন।

৪. লবঙ্গের তেল

লবঙ্গের তেল ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ দূর করে। ব্যবহার:

  • সামান্য লবঙ্গের তেল গরম করে তুলায় লাগিয়ে কানের পাশে রাখুন।

৫. আদার রস

আদায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা কানের সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। ব্যবহার:

  • আদা কুচি করে রস বের করুন।
  • সরাসরি কানে না দিয়ে কানের আশেপাশে লাগান।

চিকিৎসা

প্রচুর পরিমাণে পুঁজ পড়াসহ কান পাকার অন্যান্য লক্ষণ থাকলে রোগীকে মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক, কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, বয়সভেদে নাকের ড্রপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। অবশ্যপালনীয় কিছু নিয়মও মেনে চলতে বলা হয়। যেমন ডুব দিয়ে গোসল না করা, সাঁতার না কাটা। গোসলের সময় ইয়ার প্লাগ অথবা নারিকেল তেলভেজা তুলা কানে দিয়ে গোসল করা। ঠান্ডা পরিহার করা, ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম না খাওয়া। অযথা কান পরিষ্কার না করা। কানের ভেতর মোরগের পাখনা, কচুর ডগা, ম্যাচের কাঠি, কলমের মুখ ইত্যাদি ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের চিকিৎসাতেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কানের পর্দার ছিদ্রও বন্ধ হয়ে যায়। যদি পর্দার ছিদ্রটা বড় হয় এবং বারবার পুঁজ পড়ে, তাহলে অনেক সময় ওষুধে কাজ হয় না। সে ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ছয় মাসেও যদি জোড়া না লাগে, কানে কম শোনে, তাহলে ছোট একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পর্দা জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে সে ক্ষেত্রে কান শুকনো থাকতে হবে।

করণীয় ও সতর্কতা

  • আক্রান্ত কানে পানি ঢুকতে দেবেন না।
  • কটন বাড বা ধারালো বস্তু দিয়ে কান পরিষ্কার করবেন না।
  • সংক্রমণ বাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উপসংহার

কান পাকা রোগ খুবই অস্বস্তিকর হলেও ঘরোয়া কিছু উপায়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে, যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অবস্থা খারাপের দিকে যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *