গর্ভাবস্থায় বুক জ্বলাঃ কারণ ও বেঁচে থাকার উপায় সমূহ

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া বা হার্টবার্ন একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক নারীর ক্ষেত্রেই ঘটে। বিশেষত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং বর্ধিত গর্ভাশয়ের চাপে পাকস্থলীর এসিড উপরের দিকে উঠে আসলে বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। যদিও এটি খুবই অস্বস্তিকর, কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এই ব্লগে গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালার কারণ এবং বেঁচে থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালার কারণ

১.১. হরমোনাল পরিবর্তন

গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর মাঝখানে অবস্থিত ভালভকে শিথিল করে। এর ফলে পাকস্থলীর এসিড উপরের দিকে উঠে এসে বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।

১.২. গর্ভাশয়ের চাপ

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভাশয় বড় হয়ে পাকস্থলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে পাকস্থলীর ভিতরে থাকা খাবার এবং এসিড উপরের দিকে উঠে আসে এবং বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।

১.৩. খাদ্যাভ্যাস

ভাজা বা তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, মশলাদার খাবার, টমেটো, সাইট্রাস ফল, চকলেট, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার পাকস্থলীর এসিড উৎপাদন বাড়িয়ে বুক জ্বালার কারণ হতে পারে।

২. বুক জ্বালা থেকে বাঁচার উপায়

২.১. ছোট এবং ঘন ঘন খাবার খান

বড় পরিমাণে খাবার না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়া বুক জ্বালা কমাতে সহায়ক। এতে পাকস্থলীর উপর চাপ কম পড়ে এবং এসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

raju akon youtube channel subscribtion

২.২. খাবার খাওয়ার পর শুয়ে না পড়া

খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া পাকস্থলীর এসিড উপরের দিকে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই খাবার খাওয়ার পর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা শোয়ার আগে বসে থাকা বা হালকা হাঁটাহাঁটি করা উচিত।

২.৩. সঠিক খাদ্য নির্বাচন

বুক জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে এমন খাবার নির্বাচন করুন যা সহজে হজম হয় এবং পাকস্থলীর এসিড উৎপাদন কমায়। সাদা ভাত, ওটস, ফলের স্মুদি, টোস্ট, এবং গ্রিল করা খাবার খাওয়া নিরাপদ হতে পারে। তেল-চর্বিযুক্ত বা মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।

২.৪. উচ্চতায় শোয়া

ঘুমানোর সময় মাথা ও বুক উঁচু করে শোয়া বুক জ্বালার সমস্যাকে কমিয়ে দিতে পারে। এতে পাকস্থলীর এসিড উপরের দিকে উঠে আসতে পারে না।

২.৫. ঢিলা পোশাক পরা

গর্ভাবস্থায় ঢিলা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত। টাইট পোশাক পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করে বুক জ্বালা বাড়াতে পারে।

২.৬. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করা পাকস্থলীর এসিডের পরিমাণ কমাতে সহায়ক। তবে খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি পান না করে খাবারের মাঝখানে বা পরপর পানি পান করা ভালো।

২.৭. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এবং ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় যেমন কফি, চা বা সোডা এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা বাড়াতে পারে।

২.৮. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি বুক জ্বালাপোড়া খুব বেশি হয় এবং কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক উপযুক্ত ওষুধ দিয়ে সমস্যাটি কমাতে সহায়তা করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা। কিছু সাধারণ জীবনধারার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবুও, বুক জ্বালা যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজের যত্ন নিন, স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিন এবং সুস্থ গর্ভকালীন সময় পার করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top