হার্ট অ্যাটাকের কারণ ও প্রতিকার: হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর উপায়

হার্ট অ্যাটাক, যা হৃদরোগের একটি গুরুতর অবস্থা, হঠাৎ করেই ঘটে যেতে পারে এবং এটি জীবনহানির কারণ হতে পারে। মূলত, হার্ট অ্যাটাক ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা সীমিত হয়ে পড়ে। এতে হৃদপেশি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সাধারণত হৃদপিণ্ডের ধমনীগুলোর আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণগুলো এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হার্ট অ্যাটাকের কারণসমূহ

১. অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis): অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো ধমনীর দেওয়ালে চর্বি, কোলেস্টেরল, এবং অন্যান্য পদার্থ জমে যাওয়া। এর ফলে ধমনীর ভেতরকার স্থান সংকুচিত হয়, যা রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure): দীর্ঘ সময় ধরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ সীমিত করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৩. উচ্চ কোলেস্টেরল (High Cholesterol): খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেশি হলে তা ধমনীর দেওয়ালে জমে যায় এবং ধমনী সংকুচিত করে। এর ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

৪. ধূমপান (Smoking): ধূমপান হৃদরোগের প্রধান কারণগুলোর একটি। এটি ধমনীগুলো সংকুচিত করে এবং রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। ধূমপানকারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।

৫. ডায়াবেটিস (Diabetes): ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ধমনীতে চর্বি জমা হতে পারে, যা হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

৬. স্থূলতা (Obesity): বেশি ওজন এবং স্থূলতা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

৭. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ ধমনীতে চর্বি জমা করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ

১. বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভব করা। ২. বাম হাতে বা কাঁধে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া। ৩. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। ৪. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। ৫. বমি বমি ভাব বা ঘাম হওয়া। ৬. অসহ্য ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: কম চর্বিযুক্ত, বেশি ফলমূল, শাকসবজি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

২. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করুন। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম এবং সাইকেল চালানো হার্টের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলো হৃদপিণ্ডের ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্থূলতা হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম অনুসরণ করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।

৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক খাদ্য ও ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।

 উপসংহার

হার্ট অ্যাটাক একটি জীবনঘাতী সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। হার্ট অ্যাটাকের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, যাতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায় এবং সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব হয়।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top