গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

গ্যাস্ট্রিক আলসার, যা পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার নামেও পরিচিত, পাকস্থলীর ভেতরের প্রাচীরে সৃষ্টি হওয়া ক্ষত বা ঘা। এটি বেশ কষ্টদায়ক এবং অবহেলা করলে মারাত্মক জটিলতায় রূপ নিতে পারে। সাধারণত পাকস্থলীর এসিড মিউকাস স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণে এটি ঘটে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ (Causes of Gastric Ulcer)

raju akon youtube channel subscribtion

  1. হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (H. Pylori) সংক্রমণ:
    • পাকস্থলীর প্রাচীর নষ্ট করার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া আলসার সৃষ্টি করে।
  2. অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণ:
    • মানসিক চাপ বা খাবারের অভ্যাসের কারণে পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে আলসার হতে পারে।
  3. প্রদাহ-রোধী ওষুধ (NSAIDs):
    • ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার পাকস্থলীর প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  4. অপরিকল্পিত খাবার ও জীবনযাত্রা:
    • অতিরিক্ত ঝাল, তেলযুক্ত খাবার বা এলকোহল সেবনের কারণে।
  5. ধূমপান ও এলকোহল:
    • ধূমপান ও এলকোহল পাকস্থলীর প্রাচীর দুর্বল করে তোলে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ (Symptoms of Gastric Ulcer)

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:

১. পেটের মাঝখানে তীব্র ব্যথা:

  • খাবার খাওয়ার পর বা খালি পেটে পেটের উপরিভাগে ব্যথা হতে পারে।

২. বুক জ্বালাপোড়া:

  • পাকস্থলীর অতিরিক্ত এসিডের কারণে বুক ও গলায় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।

৩. বমি ও বমি বমি ভাব:

  • বমির সঙ্গে কখনো রক্তও আসতে পারে।

৪. খাদ্য গ্রহণের অসুবিধা:

  • খাবারের প্রতি অরুচি এবং খাওয়ার পর পেট ফেঁপে ওঠা।

৫. ওজন হ্রাস:

  • খাবারে অরুচির কারণে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।

৬. কালো রঙের মল:

  • পাকস্থলীর রক্তপাতের কারণে মলের রঙ কালো হতে পারে।

৭. দুর্বলতা ও ক্লান্তি:

  • দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণের কারণে অ্যানিমিয়া ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা (Treatment of Gastric Ulcer)

গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ ও লক্ষণের ওপর। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

  • ঝাল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান ও এলকোহল সম্পূর্ণ বন্ধ করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

২. ওষুধ:

  • অ্যান্টাসিড: পাকস্থলীর এসিড কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস (PPI): ওমিপ্রাজল, এসোমিপ্রাজল, যা এসিড উৎপাদন কমায়।
  • H2 রিসেপ্টর ব্লকার: রানিটিডিন, যা এসিড নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক: যদি H. Pylori সংক্রমণ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স।
  • প্রোটেক্টিভ এজেন্ট: সুক্রালফেট, যা পাকস্থলীর ক্ষত ঢেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

৩. অস্ত্রোপচার (সার্জারি):

  • যদি ওষুধে সাড়া না দেয় বা আলসার থেকে গুরুতর রক্তপাত হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধের উপায় (Prevention of Gastric Ulcer)

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস:

  • বেশি ঝাল, মশলাদার এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
  • ছোট ছোট অংশে বারবার খাবার খান।

২. মানসিক চাপ কমান:

  • ধ্যান বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

৩. ওষুধ সেবনের নিয়ম মেনে চলুন:

  • NSAIDs ব্যবহার করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৪. ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন:

  • এগুলো পাকস্থলীর প্রাচীর দুর্বল করে এবং আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম:

  • ভালো মানের ঘুম পাকস্থলীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সময় (When to Consult a Doctor)

  • যদি পেটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকে।
  • রক্তবমি বা কালো রঙের মল দেখা যায়।
  • দ্রুত ওজন কমে যায় বা খাবারে অরুচি হয়।
  • ওষুধের পরও সমস্যা থেকে যায়।

উপসংহার

গ্যাস্ট্রিক আলসার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সহজেই চিকিৎসা করা যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিচর্যা, এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

পরামর্শ:
গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন, যা এই সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top