চোখের সুস্থতা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চোখ ভালো রাখতে বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি কিছু বিশেষ খাবার আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক। ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আসুন জেনে নিই চোখের সুস্থতার জন্য খাওয়া উচিত এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে।
চোখের জন্য উপকারী খাবার:
১. গাজর
গাজর চোখের জন্য একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা রেটিনা এবং রাতের দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সহায়ক। এছাড়া গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চোখের কোষগুলোর ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
২. লাল এবং হলুদ বর্ণের ফলমূল
লাল এবং হলুদ বর্ণের ফলে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন এবং জেক্স্যানথিন থাকে, যা চোখের ম্যাকুলা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এসব খাবার ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে সহায়ক।
- ফল: পেঁপে, কমলা, আম, পেয়ারা
৩. পালং শাক ও সবুজ শাকসবজি
পালং শাক, ব্রকলি এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন এবং জেক্স্যানথিন রয়েছে, যা চোখের ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করে। এছাড়া এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ই থাকে, যা চোখকে ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে।
৪. ডিম
ডিমে লুটেইন, জেক্স্যানথিন এবং জিঙ্ক রয়েছে, যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং ছানি গঠনের ঝুঁকি কমায়।
৫. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে এবং চোখের টিয়ার প্রোডাকশনকে উন্নত করে। এটি রেটিনার গঠন সুরক্ষিত রাখে।
- চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল), আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড
৬. বাদাম এবং বীজ
বাদাম এবং বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চোখের কোষগুলোর ক্ষয় রোধে সহায়ক। এটি ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমায়।
- কাজু, আখরোট, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ
৭. টমেটো
টমেটোতে থাকা লাইকোপিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চোখের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে। এটি চোখের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
৮. ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
ফলিক এসিড চোখের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নতিতে কার্যকর। এ কারণে গর্ভাবস্থায় এই ধরনের খাবার গ্রহণ করা বিশেষভাবে উপকারী।
- শাকসবজি, লেবু, কলা, ডাল
৯. বেরি এবং সাইট্রাস ফল
বেরি এবং সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা চোখের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং চোখের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এটি রেটিনার জন্য সহায়ক এবং চোখের প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
- স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কমলা, লেবু
১০. গ্রীন টি
গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের কোষগুলোর ক্ষয় রোধ করে এবং চোখের প্রদাহ কমায়। এটি চোখের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখের ক্লান্তি দূর করে।
চোখের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের টিপস:
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন – পর্যাপ্ত পানি চোখের শুষ্কতা দূর করে এবং চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হাত ধুয়ে চোখ স্পর্শ করুন – চোখে জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হাত ধুয়ে নিন।
- সানগ্লাস ব্যবহার করুন – সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
- প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন – ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার চোখের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন – ঘুম চোখের ক্লান্তি দূর করতে এবং চোখকে পুনরুজ্জীবিত রাখতে সহায়ক।
উপসংহার:
চোখের যত্নে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার খেলে চোখকে সুস্থ ও তীক্ষ্ণ রাখা সম্ভব। তাই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে চোখকে রক্ষা করা এবং দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.