গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে মায়ের শরীর এবং গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। এসময় সঠিক খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে সুষম খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া, এ সময় শরীরে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে যেমন ক্ষুধা বৃদ্ধি, হজমের সমস্যা, ক্লান্তি ইত্যাদি, যা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সামলানো সম্ভব।
৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি
প্রোটিন
গর্ভস্থ শিশুর কোষ গঠনের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিম্নলিখিত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন:
- মাছ (বিশেষত সামুদ্রিক মাছ, যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ)
- মুরগির মাংস
- ডিম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- ডাল, ছোলা, মসুর
- বাদাম ও বীজ

ক্যালসিয়াম
হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম দরকার। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে মা এবং শিশুর হাড় দুর্বল হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
উৎস:
- দুধ, দই, চিজ
- শাকসবজি (পালং শাক, বাঁধাকপি)
- বাদাম (কাজু, আখরোট)
- ছোট মাছ
আয়রন
গর্ভকালীন সময়ে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাই আয়রনের চাহিদা বাড়ে। আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা হতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
উৎস:
- লাল মাংস
- ডিমের কুসুম
- কিসমিস, খেজুর
- পালং শাক, মেথি শাক
ফলিক অ্যাসিড
শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
উৎস:
- বিনস
- লিভার
- পালং শাক, ব্রকলি
- ওটস, ছোলা
ভিটামিন
গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন এ, বি, সি ও ডি-এর প্রয়োজন। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য দরকারি, আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরে শক্তি যোগায়।
উৎস:
- কমলা, আপেল, পেয়ারা
- গাজর, টমেটো
- ডিমের কুসুম
- সূর্যালোকে থাকা (ভিটামিন ডি এর জন্য)
৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য খাবারের তালিকা
সকালের নাস্তা:
- এক গ্লাস দুধ (ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ)
- সিদ্ধ ডিম বা ওটস
- ফল (কমলা, আপেল, কলা)
- বাদাম ও শুকনো ফল
মধ্যাহ্নভোজ:
- ভাত বা রুটি
- মাছ বা মুরগির মাংস
- শাকসবজি ও ডাল
- টক দই বা লাবান
বিকালের খাবার:
- বাদাম, কিশমিশ, খেজুর
- ফলের রস বা গরম দুধ
- হালকা বিস্কুট বা চিড়া
রাতের খাবার:
- হালকা ভাত বা খিচুড়ি
- মাছ বা মুরগির মাংস
- সবজি ও দই
- এক গ্লাস গরম দুধ
৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবারে যা এড়িয়ে চলতে হবে
১. অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) ২. প্রসেসড ফুড ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ৩. কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার (কাঁচা মাছ, কাঁচা ডিম, সুশি ইত্যাদি) ৪. অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজা খাবার ৫. কৃত্রিম রঙ ও সংরক্ষিত খাবার
গর্ভকালীন সময়ে পানি ও হাইড্রেশন
গর্ভাবস্থায় পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন এবং প্রসবকালীন জটিলতা হতে পারে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, লেবু পানি পান করাও উপকারী।
উপসংহার
গর্ভাবস্থার ৫ মাসে সুস্থ থাকতে ও শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে সুষম খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। মা যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তবে শিশুর সুস্থতা ও সঠিক বিকাশ নিশ্চিত হবে। খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করলে মায়ের সুস্থতা বজায় থাকবে এবং সন্তানও হবে সুস্থ ও সবল।