গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বা প্রথম ত্রৈমাসিক (First Trimester) ভ্রূণের বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়—
শিশুর মস্তিষ্ক, হার্ট, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গ গঠন শুরু হয়
মায়ের শরীরে নানা ধরনের হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে
বমিভাব, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে
এ কারণে এই সময়ে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা অপরিহার্য। তাই, ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন খাবার এড়িয়ে চলা দরকার তা জানা জরুরি।
এই ব্লগে আমরা জানবো—
৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য সেরা খাবার
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা
কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
খাবারের সাধারণ নিয়ম
৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য সেরা খাবার
১. ফল ও সবজি 

ফল ও সবজিতে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার থাকে যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
পুষ্টিকর ফল: আপেল, কলা, কমলা, আঙ্গুর, পেয়ারা, আম, বেদানা
সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, মেথি শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, গাজর, শসা
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার 

প্রোটিন শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেশি গঠনে সহায়ক।
প্রাকৃতিক প্রোটিনের উৎস: ডিম, দুধ, দই, ছোলা, ডাল, মসুর ডাল, সয়াবিন
মাছ ও মাংস: ছোট মাছ, দেশি মুরগির মাংস, গরুর মাংস (অল্প পরিমাণে)
৩. ক্যালসিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার 

গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম এবং রক্তের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আয়রন জরুরি।
ক্যালসিয়ামের উৎস: দুধ, দই, ছানা, বাদাম, ছোট মাছ
আয়রনের উৎস: লাল শাক, বিট, খেজুর, কিসমিস, ডিমের কুসুম, কালোজিরা
৪. ফোলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার 

ফোলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফোলিক অ্যাসিডের উৎস: ব্রকলি, লাল শাক, ডাল, ডিম, বাদাম, কমলা, লেবু
৫. স্বাস্থ্যকর চর্বি 

শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: বাদাম, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, ঘি, মাছের তেল
৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাবার তালিকা (ডায়েট চার্ট)
সকালবেলা (Breakfast)
১ গ্লাস দুধ
১ টুকরো বাদাম বা চিজ
কলা/আপেল/কমলা
সকালের নাস্তা (Mid-morning snack)
ওটস/চিড়া/সুজি
১টি সিদ্ধ ডিম বা ১ বাটি দই
দুপুরের খাবার (Lunch)
১ কাপ ভাত (সিদ্ধ চাল)
১ বাটি ডাল
মাছ/মুরগির মাংস
সবজি (লাল শাক, গাজর, ব্রকলি)
১টি সিজনাল ফল
বিকেলের নাস্তা (Evening snack)
১ গ্লাস ফলের জুস
১ মুঠো বাদাম/কিসমিস
রাতের খাবার (Dinner)
১ রুটি/হালকা ভাত
ডাল/সবজি
দুধ/দই
গর্ভবতী মায়ের জন্য যে খাবার এড়িয়ে চলা উচিত 
অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা, কফি, সফট ড্রিংকস) – শিশুর ওজন কমাতে পারে
কাঁচা বা আধা সিদ্ধ খাবার (সুশি, কাঁচা ডিম) – জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে
বেশি লবণ ও চিনি যুক্ত খাবার (ফাস্টফুড, চিপস, মিষ্টি) – ওজন বাড়াতে পারে
অ্যালকোহল ও ধূমপান – শিশুর বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
কোল্ড ড্রিংকস ও অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার – হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
পর্যাপ্ত পানি পান করুন – প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
ছোট ছোট মিল খান – প্রতিবার অল্প করে বারবার খান
প্রস্তুত খাবার এড়িয়ে চলুন – বাসায় তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান
ব্যায়াম করুন – হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন
পর্যাপ্ত ঘুম নিন – প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত
উপসংহার: গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করুন
৩ মাসের গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার গ্রহণ মায়ের ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভাবস্থার জটিলতা কমবে এবং শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত হবে।