মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আমাদের চিন্তা-ভাবনা বা মাইন্ডসেটও বিশাল প্রভাব ফেলে। কিছু নেতিবাচক মাইন্ডসেট আছে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে। এ ধরনের মানসিকতা চর্চা করা মানে আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা ডেকে আনি। তাই, সুস্থ মানসিক জীবনের জন্য কিছু ক্ষতিকর মাইন্ডসেট বর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
চলুন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এমন পাঁচটি বর্জনীয় মাইন্ডসেট নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. পারফেকশনিজম বা অতিরিক্ত নিখুঁত হতে চাওয়া
পারফেকশনিজম এক ধরনের মানসিক ফাঁদ, যা আমাদের সামান্যতম ভুলও মেনে নিতে দেয় না। পারফেকশনিস্ট মাইন্ডসেট আমাদের নিজেদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিই, যার ফলে হতাশা এবং উদ্বেগ বাড়ে। পারফেকশনিজম আমাদের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে, কারণ নিখুঁত হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
কীভাবে এটি বর্জন করবেন: নিজের থেকে অত্যধিক প্রত্যাশা কমিয়ে রাখুন এবং ছোট ছোট সাফল্যগুলো উদযাপন করুন। মনে রাখবেন, ভুল করা শিখার অংশ।
২. চিন্তার অতিরিক্ত বিশ্লেষণ বা Overthinking
অতিরিক্ত চিন্তা করা আমাদের মানসিক শান্তিকে ধ্বংস করে। Overthinking এর ফলে আমরা সাধারণ সমস্যাগুলোও জটিল করে তুলি এবং অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তায় ডুবে যাই। এটি উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক চাপে রূপান্তরিত হতে পারে। Overthinking আমাদের বর্তমানকে উপভোগ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে তোলে।
কীভাবে এটি বর্জন করবেন: প্রতিটি সমস্যা সহজভাবে দেখার চেষ্টা করুন এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিন। মাইন্ডফুলনেস চর্চা এই মাইন্ডসেট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক।
৩. নিজেকে অপরের সাথে তুলনা করা
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করার মানসিকতা আমাদের আত্মমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে। সমাজের চাপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রদর্শিত জীবনযাত্রা দেখে আমরা নিজেদের সাথে অন্যদের তুলনা করি এবং মনে করি আমাদের জীবনে কিছু নেই। এর ফলে আমরা নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা হারিয়ে ফেলি এবং হতাশ হয়ে পড়ি।
কীভাবে এটি বর্জন করবেন: নিজের জীবনের অর্জন এবং অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিন। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের জীবন ভিন্ন এবং প্রত্যেকের নিজের নিজের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
৪. অতীতের প্রতি অনুশোচনা করা
অনেকেই অতীতের ভুল বা ব্যর্থতা নিয়ে অনুশোচনা করেন এবং সেই ঘটনাগুলো বারবার মনে করে হতাশায় ডুবে থাকেন। অতীতে কী ঘটেছে তা নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারি না, কিন্তু তা নিয়ে ভেবে চলা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতীতের অনুশোচনা আমাদের ইতিবাচকভাবে সামনে এগোনোর শক্তি কমিয়ে দেয়।
কীভাবে এটি বর্জন করবেন: অতীতকে মেনে নিয়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দিন। ভুল থেকে শিখুন এবং সেগুলোকে ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করুন।
৫. ভয় ও আশঙ্কা নিয়ে বেঁচে থাকা
ভয় এবং আশঙ্কা মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় শত্রু। নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে যদি সব সময় ব্যর্থতার ভয় কাজ করে, তবে আমরা কখনোই সামনে এগোতে পারব না। অনেকেই অজানা ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন, যা তাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে।
কীভাবে এটি বর্জন করবেন: ভয়কে একটি প্রাকৃতিক অনুভূতি হিসেবে মেনে নিন, কিন্তু এটি আপনাকে দমিয়ে রাখতে দেবেন না। প্রতিটি পদক্ষেপে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন এবং ভবিষ্যত নিয়ে অতিরিক্ত আশঙ্কা না করে বর্তমানকে কাজে লাগান।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, শুধু শারীরিক যত্নই যথেষ্ট নয়; আমাদের মনোভাব এবং চিন্তাভাবনার উপরও নজর দেওয়া উচিত। উপরোক্ত ক্ষতিকর মাইন্ডসেটগুলো বর্জন করে আমরা মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং হতাশার পরিমাণ কমাতে পারি এবং সুস্থ, সুখী জীবনযাপন করতে পারি। ইতিবাচক মাইন্ডসেট গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের মানসিক শক্তি এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানো সম্ভব।