প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত পুরুষদের মধ্যে একটি সাধারণ যৌন সমস্যা, যা অনেক সময় বিবাহিত জীবনকে জটিল করে তোলে। বিশেষ করে স্ত্রীর যোনিপথে লিঙ্গ স্পর্শ করা মাত্রই বীর্যপাত হলে তা সঙ্গীর জন্যও হতাশাজনক হয়ে ওঠে। তবে এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা, এবং সঠিক পরামর্শ ও পদ্ধতির মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
দ্রুত বীর্যপাতের কারণ:
দ্রুত বীর্যপাতের পেছনে শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরনের কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- মনস্তাত্ত্বিক কারণ:
- অতিরিক্ত উত্তেজনা
- সেক্স নিয়ে উদ্বেগ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
- পূর্বের কোনও খারাপ যৌন অভিজ্ঞতা
- সম্পর্কের টানাপোড়েন বা দাম্পত্য কলহ
- শারীরিক কারণ:
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- প্রস্টেটের সমস্যার কারণে যৌনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা
- স্নায়ুর অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
- লিঙ্গের উত্থানজনিত দুর্বলতা
- নতুন যৌন অভিজ্ঞতা:
- প্রথমবারের মতো সেক্স করলে বা দীর্ঘদিন বিরতিতে সহবাসের ফলে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
- সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া:
- সঙ্গীর নেতিবাচক মন্তব্য বা অপূর্ণতা নিয়ে আশঙ্কা থাকা
দ্রুত বীর্যপাতের সমাধান ও পদ্ধতি:
দ্রুত বীর্যপাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কার্যকরী পদ্ধতি ও সমাধান নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সেক্স থেরাপি:
সেক্স থেরাপি একজন দক্ষ থেরাপিস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে যৌন সমস্যাগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে কাজ করা হয়। এটি দম্পতিদের একে অপরের সাথে যৌন সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে সাহায্য করে এবং সেক্সুয়াল পারফরম্যান্স উন্নত করতে সহায়তা করে।
২. “স্টার্ট অ্যান্ড স্টপ” পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে, পুরুষ লিঙ্গের স্পর্শ বা যৌন উত্তেজনা শুরু হওয়ার কিছু সময় পরে থেমে যায়, তারপর পুনরায় শুরু করে। এভাবে কয়েকবার প্র্যাকটিস করলে বীর্যপাত বিলম্বিত করা যায়।
৩. “স্কুইজ” পদ্ধতি:
এতে যখন পুরুষ বীর্যপাতের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন লিঙ্গের মাথা হালকাভাবে চেপে ধরা হয়। এতে বীর্যপাতের সময় কিছুটা বিলম্ব হয় এবং নিয়ন্ত্রণ বাড়ে।
৪. ফোরপ্লে ও উত্তেজনা বাড়ানো:
যৌন মিলনের আগে পর্যাপ্ত ফোরপ্লে করলে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই বেশি সময় উত্তেজিত থাকতে পারেন। এটি যৌনক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত বীর্যপাতের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
৫. মানসিক চাপ কমানো:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা যৌন ক্রিয়াকলাপে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমানো যায়, যা যৌন উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৬. ওষুধ:
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক দ্রুত বীর্যপাতের জন্য কিছু ওষুধ বা ক্রিমের পরামর্শ দিতে পারেন। এই ওষুধগুলো যৌনক্রিয়ায় স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমাতে এবং সময় বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. কন্ডম ব্যবহার:
কিছু বিশেষ ধরনের কন্ডম যেমন “থিক কন্ডম” বা “ডেসেনসিটাইজিং কন্ডম” ব্যবহার করলে বীর্যপাতের সময় বিলম্বিত হতে পারে।
৮. কেগেল এক্সারসাইজ:
কেগেল এক্সারসাইজ বা পেরিনিয়াম পেশীর ব্যায়াম বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। এটি নিয়মিত করলে লিঙ্গের স্নায়ু ও পেশী শক্তিশালী হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী যৌন ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ডাক্তারের পরামর্শ:
যদি উপরের কোনো পদ্ধতি কাজ না করে বা সমস্যাটি গুরুতর হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা বা থেরাপি আপনাকে দ্রুত বীর্যপাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
উপসংহার:
দ্রুত বীর্যপাত একটি অস্বস্তিকর সমস্যা হলেও এটি চিকিৎসাযোগ্য। সঠিক চিকিৎসা, সেক্স থেরাপি, এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এছাড়া সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা ও মানসিক চাপ কমিয়ে যৌন জীবনের মানোন্নয়ন করা যায়।