বর্তমান সময়ে ব্যস্ত জীবনে অনেকেই দ্রুত পুষ্টি পাওয়ার আশায় মাল্টিভিটামিনের বড়ি গ্রহণ করছেন। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিনের বড়ি খাওয়া যেতে পারে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর বিকল্প হতে পারে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার। শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলগুলো প্রকৃত খাবার থেকেই পাওয়া সম্ভব, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি কার্যকর।
স্বাস্থ্যকর খাবার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। মাল্টিভিটামিনের বড়ির মাধ্যমে পুষ্টি পেতে হলে নির্দিষ্ট ডোজ মেনে চলতে হয়, কিন্তু প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে এই পুষ্টি সহজেই পাওয়া যায়।
মাল্টিভিটামিনের বড়ির চেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের উপকারিতা:
১. প্রাকৃতিক পুষ্টি:
স্বাস্থ্যকর খাবারে প্রাকৃতিকভাবে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে শরীরে উপকারী প্রভাব ফেলে।
২. খাদ্যের অন্যান্য উপাদান:
স্বাস্থ্যকর খাবারে শুধু ভিটামিন নয়, বরং আঁশ, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
৩. সাইড এফেক্ট কম:
মাল্টিভিটামিনের বড়ি অতিরিক্ত খেলে অনেক ক্ষেত্রেই সাইড এফেক্ট হতে পারে, যেমন হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি ইত্যাদি। তবে প্রাকৃতিক খাবার খেলে এই সমস্যা থাকে না।
৪. সঠিক ভারসাম্য:
প্রাকৃতিক খাবারে ভিটামিন এবং মিনারেলের সঠিক ভারসাম্য থাকে, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়। কিন্তু বড়ির মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
মাল্টিভিটামিনের বড়ির পরিবর্তে খাওয়া উচিত যে সকল স্বাস্থ্যকর খাবার:
১. সবুজ শাকসবজি:
- শাকসবজি হলো ভিটামিন এ, সি, কে এবং মিনারেলের চমৎকার উৎস। পালং শাক, ব্রোকলি, কপি, মুলা শাক ইত্যাদি খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যায়।
2. ফলমূল:
- ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। প্রতিদিন আপেল, কমলা, পেয়ারা, ডালিম, কলা ইত্যাদি ফল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. বাদাম ও বীজ:
- বাদাম ও বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ফাইবার, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। আমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড, তিসি বীজ ইত্যাদি বাদাম খেলে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
৪. ডিম:
- ডিম হলো ভিটামিন বি১২, প্রোটিন এবং চর্বিযুক্ত এসিডের চমৎকার উৎস। প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।
৫. মাংস এবং মাছ:
- মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং মাছ হলো প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। মাছ খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
৬. দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার:
- দুধ, দই, পনির ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন থাকে। যা হাড় এবং দাঁত শক্ত রাখে।
৭. শস্যদানা ও শস্যজাতীয় খাবার:
- ওটস, গম, চাল, ব্রাউন রাইস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, ভিটামিন বি এবং মিনারেল থাকে, যা শরীরের পুষ্টি যোগাতে সহায়ক।
৮. লাল শাক এবং বিটরুট:
- লাল শাক এবং বিটরুট হলো আয়রনের চমৎকার উৎস, যা শরীরে রক্তের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
মাল্টিভিটামিনের বড়ির সঠিক ব্যবহার:
যদি কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত পুষ্টিহীনতায় ভুগেন এবং শুধুমাত্র খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ করা সম্ভব না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিনের বড়ি খাওয়া যেতে পারে। তবে বাড়তি মাল্টিভিটামিনের ডোজ নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মাল্টিভিটামিনের বড়ির চেয়ে প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শরীরের জন্য অধিকতর উপকারী। প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সম্ভব এবং সুস্থ থাকা যাবে। প্রকৃত খাবার থেকেই পাওয়া ভিটামিন ও মিনারেল দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করে।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.