ঔষধ খেলে কি মানসিক রোগ বাড়ে?

মানসিক রোগের চিকিৎসায় ঔষধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে, রোগীর মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে আনতে এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ঔষধ ব্যবহার করা হয়। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, ঔষধ খেলে কি মানসিক রোগ বাড়ে বা এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিনা। এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য কিছু বিষয় জানা জরুরি।

মানসিক রোগের চিকিৎসায় ঔষধের ভূমিকা

মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ঔষধগুলো হলো অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (Antidepressants), অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ড্রাগস (Anti-anxiety drugs), এবং অ্যান্টিসাইকোটিকস (Antipsychotics)। এ ধরনের ঔষধগুলো রোগীর মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা তাদের মানসিক স্থিতি বজায় রাখে।

raju akon youtube channel subscribtion

ঔষধের কার্যকারিতা:

  1. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: বিষণ্ণতা বা অবসাদের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
  2. অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ড্রাগস: উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা কমায়।
  3. অ্যান্টিসাইকোটিকস: সিজোফ্রেনিয়া বা অন্যান্য গুরুতর মানসিক রোগের লক্ষণ যেমন হ্যালুসিনেশন ও ভ্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

ঔষধ খাওয়ার পরে মানসিক রোগের অবনতি হওয়ার কারণসমূহ

যদিও মানসিক রোগের চিকিৎসায় ঔষধ খুবই কার্যকর, তবে কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ গ্রহণের পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে। এর কারণগুলো হলো:

১. সঠিক ঔষধ না খাওয়া:

প্রত্যেক রোগীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ভিন্ন। তাই সঠিক ঔষধ ও তার ডোজ নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ বা ডোজ নির্বাচন করা না হয়, তবে তা রোগের অবস্থা বাড়াতে পারে।

২. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects):

মানসিক রোগের জন্য ব্যবহৃত ঔষধগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন: ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঘোরা, ওজন বৃদ্ধি, বা হরমোনের অসামঞ্জস্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো মানসিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৩. ঔষধের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা (Tolerance):

দীর্ঘদিন একই ঔষধ ব্যবহারের ফলে শরীরের উপর সেই ঔষধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তখন রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয়ে অবনতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

৪. হঠাৎ ঔষধ বন্ধ করা:

অনেক সময় রোগীরা নিজেদের ইচ্ছায় ঔষধ বন্ধ করে দেন, যা রোগের অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। মানসিক রোগের ঔষধ হঠাৎ করে বন্ধ করলে রোগী রিবাউন্ড ইফেক্ট বা রোগের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সম্মুখীন হতে পারেন।

৫. অন্যান্য শারীরিক সমস্যা:

কোনো রোগীর যদি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও থাকে, যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বা ডায়াবেটিস, তাহলে মানসিক রোগের ঔষধ সঠিকভাবে কাজ না করতে পারে, এবং এর ফলে মানসিক রোগের অবনতি হতে পারে।

ঔষধ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে রোগ বাড়বে না

যদি মানসিক রোগের ঔষধ সঠিকভাবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়, তবে সাধারণত রোগের অবনতি ঘটে না। বরং রোগী ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে এগিয়ে যেতে থাকে। ঔষধের কার্যকারিতা নির্ভর করে সঠিক ডোজ এবং নিয়মিত ব্যবহারের উপর।

কিছু করণীয়

১. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না: মানসিক রোগের ঔষধ প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহার করতে হয়, তাই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে।

২. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলুন: যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে চিকিৎসককে জানানো উচিত। তিনি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারেন।

৩. নিয়মিত ফলো-আপ: রোগের অবস্থা এবং ঔষধের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করার জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।

ঔষধ মানসিক রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর, তবে সঠিকভাবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা জরুরি। যদি ঔষধ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে সাধারণত মানসিক রোগ বাড়ে না, বরং রোগী সুস্থতার দিকে এগিয়ে যায়। ঔষধ বন্ধ করা বা পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *