জার্মানিতে বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়লে কি সত্যিই টাকা মেলে?

বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশ তাদের জন্মহার বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করছে। জার্মানি, ইউরোপের অন্যতম উন্নত দেশ, তাদের জন্মহার কমে যাওয়ার সমস্যায় পড়েছে এবং এটি সমাধান করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ প্রকল্প বা সাহায্য প্যাকেজ রয়েছে, যার মাধ্যমে একাধিক সন্তান থাকা পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে প্রশ্ন হলো, জার্মানিতে বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়লে কি সত্যিই টাকা মেলে?

চলুন, জার্মানির এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

জার্মানির পারিবারিক সহায়তা নীতি

জার্মানি একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদানকারী দেশ, যেখানে জন্মহার বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সহায়তার জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ আর্থিক সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে সন্তানসংখ্যা বাড়ানোর প্রেরণা সৃষ্টি করা হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

  1. কিডস গ্র্যান্ট (Kindergeld): জার্মানিতে পরিবারগুলো প্রতি মাসে তাদের সন্তানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পায়, যাকে বলা হয় কিডস গ্র্যান্ট (Kindergeld)। এই টাকা শিশুদের লালন-পালন এবং শিক্ষায় সহায়তা করার জন্য দেয়া হয়। প্রতিটি শিশু থাকা পরিবার প্রতি মাসে ২০০ ইউরোরও বেশি পায়, যা পরিবারের মাসিক খরচ কিছুটা কমিয়ে দেয়। এটি মূলত শিশুদের সংখ্যা অনুযায়ী বাড়ানো হয়।

    • প্রথম শিশুর জন্য ২৫২ ইউরো (প্রতি মাসে)
    • দ্বিতীয় শিশুর জন্য ২৫২ ইউরো (প্রতি মাসে)
    • তৃতীয় শিশুর জন্য ৩০২ ইউরো (প্রতি মাসে)
    • চতুর্থ বা তার পরের শিশুদের জন্য ৩৫০ ইউরো (প্রতি মাসে)
  2. পারেন্টাল লিভ (Elternzeit) এবং প্যারেন্টাল অ্যালাউন্স (Elterngeld): জার্মানিতে বাচ্চা হওয়ার পর বাবা-মাকে কিছু সময়ের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিতে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সুবিধাটিকে বলা হয় পারেন্টাল লিভ (Elternzeit)। শিশুর জন্মের পর বাবা-মা সাধারণত এক বছরের জন্য লিভ নিতে পারেন এবং এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্যারেন্টাল অ্যালাউন্স (Elterngeld) প্রদান করা হয়।

    • প্যারেন্টাল অ্যালাউন্সে প্রতিমাসে ৬০০-১৮০০ ইউরো পর্যন্ত সহায়তা পাওয়া যায়, যা পরিবারের আয়ের একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারে।
    • প্যারেন্টাল লিভের সময় বাবা-মা ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন, এবং এই সময় তাদের আয়ের ওপর ভিত্তি করে সহায়তা প্রদান করা হয়।
  3. শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা: জার্মানি, পরিবারের প্রতি সহায়তা প্রদান ছাড়াও, শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাচ্চাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রায় সব স্তরের জন্য সরকার নিশ্চিত করে থাকে। এটি বাচ্চাদের পরিবারগুলোর জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ এর মাধ্যমে পরিবারগুলি অর্থনৈতিকভাবে কম চাপ অনুভব করে।
  4. ট্যাক্স ব্রেক (Tax Benefits): যদি আপনার পরিবারে একাধিক সন্তান থাকে, তবে জার্মানির ট্যাক্স সিস্টেম অনুযায়ী আপনাকে কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়। সন্তানসংখ্যা অনুযায়ী ট্যাক্সের হার কমিয়ে দেওয়া হয়, যা পরিবারগুলোর জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা। এছাড়া, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসামগ্রী এবং দৈনন্দিন খরচের ক্ষেত্রে বিশেষ করছাড়ের সুবিধাও থাকে।

বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ

জার্মানি সরকার বিভিন্ন ধরনের নীতি গ্রহণ করে পরিবারগুলোকে প্রেরণা দেওয়ার চেষ্টা করছে যাতে তারা বড় পরিবার গঠন করতে আগ্রহী হয়। এর মধ্যে কিছু বিশেষ উদ্যোগ হলো:

  1. আবাসন সহায়তা: জার্মানি সরকার পরিবারগুলিকে সন্তানসংখ্যা বাড়ানোর জন্য আবাসন সহায়তা প্রদান করে থাকে। এটি বিশেষ করে বড় পরিবারগুলির জন্য একটি বড় সহায়তা হতে পারে।
  2. শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা এবং যত্ন: জার্মানিতে ছোট শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা এবং যত্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক চাপ কিছুটা কমে যায়, এবং সন্তান পালনে আরও সুবিধা হয়।
  3. অন্তর্জাতিক অভিবাসীদের জন্য বিশেষ সহায়তা: জার্মানিতে বসবাসরত অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিশেষ সহায়তা প্রদান করা হয় যাতে তারা সমাজের মূল ধারায় এসে তাদের সন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করতে পারে।

বাস্তবে কী ঘটে?

এটি একদিকে যেমন সত্য যে জার্মানি পরিবারগুলিকে বেশ কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, অন্যদিকে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। শিশুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রদত্ত এই সব সুবিধা পরিবারের আর্থিক চাপ কিছুটা কমায়, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে পারিবারিক সচ্ছলতা বা দীর্ঘমেয়াদী স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করে না। তাছাড়া, যেহেতু অধিক সন্তান থাকা মানে বাড়তি দায়িত্ব, তাই সব পরিবারই এই ধরনের সহায়তার মাধ্যমে সন্তানের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে না।

জার্মানিতে বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়ালে কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব, তবে এটি শুধুমাত্র সরকারী সাহায্যের ওপর নির্ভর করে না। যদিও এই সাহায্যগুলি বড় পরিবারের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে, তবুও এটি পরিবারগুলির জন্য শুধুমাত্র কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, পূর্ণস্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয় না। তবে, সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে পারে এবং একটি স্থিতিশীল জীবন গঠন করতে সহায়তা পেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top