ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার, যা প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও উপকারী চর্বি সরবরাহ করে। তবে অনেকেই মনে করেন যে ডিম খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) রোগীরা প্রায়ই এই প্রশ্ন করেন—ডিম কি তাদের জন্য ক্ষতিকর?
এই ব্লগে আমরা বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করবো, ডিম রক্তচাপে কী প্রভাব ফেলে, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য ডিম কতটা নিরাপদ, এবং কিভাবে ডিম খাওয়া উচিত।
ডিম ও রক্তচাপ: কী বলে গবেষণা?
গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে ডিমে থাকা প্রোটিন ও উপকারী পুষ্টি উপাদান হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে। তবে ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকায় এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিছু মানুষের জন্য রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
গবেষণার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- ২০১৮ সালে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায় না, বরং এটি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
- ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার (যেমন বেশি পরিমাণে ডিমের কুসুম) খেলে কিছু মানুষের রক্তচাপ বাড়তে পারে।
সুতরাং, পরিমাণ অনুযায়ী ডিম খাওয়া হলে এটি সাধারণত রক্তচাপ বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়।
ডিমের উপকারী পুষ্টিগুণ
ডিমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে—
উপাদান | উপকারিতা |
প্রোটিন | পেশী গঠনে সহায়ক ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড | হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ও রক্তচাপ কমাতে পারে |
কোলিন | মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে ও প্রদাহ কমায় |
লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় |
ডিম কি সত্যিই রক্তচাপ বাড়ায়?
১. ডিমের কুসুম ও কোলেস্টেরল
ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বেশি থাকে (প্রতি ডিমে প্রায় ১৮৬ মিগ্রা কোলেস্টেরল)। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে কিছু মানুষের জন্য এটি রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তবে গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে স্বাভাবিক ডায়েটের অংশ হিসেবে ডিম খাওয়া হলে এটি রক্তচাপের ওপর বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
২. ডিমের সাদা অংশ: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ডিমের সাদা অংশ সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মুক্ত এবং এতে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৩. রান্নার ধরন ও রক্তচাপের প্রভাব
ডিম কিভাবে রান্না করা হয়, তার ওপরও এটি রক্তচাপ বাড়াবে কি না তা নির্ভর করে।
- সেদ্ধ ডিম: স্বাস্থ্যকর, কারণ এতে অতিরিক্ত চর্বি যোগ হয় না।
- ভাজা ডিম (তেল বা মাখন দিয়ে): অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ থাকলে এটি রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- অমলেট (সবজি ও অল্প তেল দিয়ে তৈরি): স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ রোগীরা কীভাবে ডিম খাবেন?
- প্রতিদিন ১-২টি ডিম খাওয়া নিরাপদ (বিশেষ করে সাদা অংশ)।
- ডিম সেদ্ধ বা কম তেলে রান্না করে খাওয়া ভালো।
- লবণ কম ব্যবহার করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- ডিমের সঙ্গে শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অলিভ অয়েল) খেলে এটি উপকারী হতে পারে।
ডিম ছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু খাবার
যদি আপনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে নিচের খাবারগুলো ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন—
- সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, ব্রকলি)
- ওটস ও সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার
- ডাবের পানি ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
- কালো চকোলেট (অল্প পরিমাণে)
- মাছ (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ)
- ফল যেমন কলা, কমলা ও বেদানা
উপসংহার
ডিম একটি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার, যা সাধারণত রক্তচাপ বাড়ায় না। বরং, এটি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ডিমের কুসুম খেলে বা ভুলভাবে রান্না করলে (যেমন অতিরিক্ত তেল ও লবণসহ) এটি কিছু মানুষের জন্য রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ রোগী হন, তাহলে প্রতিদিন ১-২টি সেদ্ধ বা কম তেলে রান্না করা ডিম খেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মেনে চললে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আপনার যদি এই বিষয়ে আরও প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।