পরিচিতি
প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি (উদ্বেগ) উভয়ই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যা ব্যক্তির জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। অনেকেই এই দুইটি সমস্যার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে অসুবিধা অনুভব করেন। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকনের মতামত অনুযায়ী, প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্যানিক অ্যাটাক: সংজ্ঞা ও লক্ষণ
সংজ্ঞা
প্যানিক অ্যাটাক হলো হঠাৎ করে অস্বাভাবিক উদ্বেগ এবং ভয়ের একটি তীব্র আক্রমণ। এটি সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়, তবে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
লক্ষণ
- হঠাৎ তীব্র ভয় বা আতঙ্কের অনুভূতি
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- শ্বাসকষ্ট
- ঘাম হওয়া
- কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি
- বুক ব্যথা বা অস্বস্তি
- মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব
- নিস্তেজ বা অবশ অনুভূতি
- মৃত্যু বা পাগল হয়ে যাওয়ার ভয়
অ্যাংজাইটি: সংজ্ঞা ও লক্ষণ
সংজ্ঞা
অ্যাংজাইটি হলো একটি স্থায়ী উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার অবস্থা, যা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
- দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা
- ক্লান্তি
- ঘুমের সমস্যা
- একাগ্রতার অভাব
- মেজাজ খিটখিটে থাকা
- পেশীর টানাপোড়েন
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- অতিরিক্ত চিন্তা করা বা কুসংস্কার
প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটির পার্থক্য
১. আকস্মিকতা
- প্যানিক অ্যাটাক: হঠাৎ এবং তীব্র আক্রমণ, কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়।
- অ্যাংজাইটি: স্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ, যা ক্রমাগত থাকে।
২. তীব্রতা
- প্যানিক অ্যাটাক: তীব্র ভয় এবং আতঙ্ক, যা শারীরিক লক্ষণ সহ উপস্থিত হয়।
- অ্যাংজাইটি: কম তীব্র, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা।
৩. ট্রিগার
- প্যানিক অ্যাটাক: নির্দিষ্ট ট্রিগার ছাড়াই হঠাৎ ঘটে যেতে পারে।
- অ্যাংজাইটি: বিশেষ পরিস্থিতি, ঘটনা বা চিন্তা দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়।
৪. প্রভাব
- প্যানিক অ্যাটাক: শরীরিক এবং মানসিক অস্বস্তির তীব্র আক্রমণ।
- অ্যাংজাইটি: মানসিক অস্বস্তি এবং উৎকণ্ঠা, যা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটির মিল
১. উদ্বেগ
উভয় অবস্থায়ই উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার উপস্থিতি থাকে।
২. শারীরিক লক্ষণ
উভয় অবস্থায়ই শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন দ্রুত হৃদস্পন্দন, ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট।
৩. মানসিক অস্বস্তি
উভয় অবস্থায়ই মানসিক অস্বস্তি এবং অস্থিরতা থাকে।
চিকিৎসা এবং পরামর্শ
১. কাউন্সেলিং এবং থেরাপি
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) এবং ডায়ালেক্টিক বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT) প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি উভয়ের চিকিৎসায় কার্যকর।
২. মেডিকেশন
কিছু ক্ষেত্রে, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা মেডিকেশন পরামর্শ দিতে পারেন, যা উদ্বেগ এবং আতঙ্ক কমাতে সহায়ক।
৩. রিলাক্সেশন টেকনিক
রিলাক্সেশন টেকনিক, যেমন ডিপ ব্রিথিং, মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম উদ্বেগ এবং আতঙ্ক কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৪. জীবনযাত্রার পরিবর্তন
সুস্থ জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
উপসংহার
প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি উভয়ই মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুতর সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং থেরাপির মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব। যদি আপনি এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তবে একজন প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা এবং সমর্থনের মাধ্যমে প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটির সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।