ক্যানসার একটি জটিল ও মারাত্মক রোগ, যা অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অনুসরণ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর খাবার
১. সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। পালং শাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, কোলার্ড শাকের মতো সবজিতে ক্যানসার প্রতিরোধী যৌগ বিদ্যমান, যা শরীরকে সুস্থ রাখে।
২. ফলমূল
ফলমূল, বিশেষ করে বর্ণীল ফল, যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, কমলালেবু ইত্যাদি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। প্রতিদিন তাজা ফল খাওয়া ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৩. লাইকোপিন সমৃদ্ধ খাবার
লাইকোপিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা টমেটো, তরমুজ ও লাল ক্যাপসিকামে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপিন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমায়, বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে।
৪. আঁশযুক্ত খাবার
আঁশযুক্ত খাবার, যেমন গোটা শস্য, বাদাম, ডাল, এবং ব্রাউন রাইস হজমশক্তি উন্নত করে এবং অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। আঁশ শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, যা ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে কার্যকর।
৫. ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন এ, সি, এবং ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। গাজর, কমলালেবু, কিউই, মিষ্টি আলু এবং বাদামে এই ভিটামিনগুলো প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
৬. সবুজ চা
সবুজ চায়ে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন ১-২ কাপ সবুজ চা পান করা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৭. রসুন
রসুনে থাকা সালফার যৌগ ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রসুন অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
৮. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ (সালমন, ম্যাকারেল), আখরোট, এবং ফ্ল্যাক্সসিড শরীরে প্রদাহ কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায়
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে শুধু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নয়, কিছু অভ্যাস বদল করাও জরুরি। যেমন:
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন
প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন সসেজ, সালামি, এবং বেকনে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।
২. চিনি ও অতিরিক্ত চর্বি কমান
অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপাদন করে, যা ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি করতে পারে। তাই চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন।
৩. অ্যালকোহল পরিহার করুন
অ্যালকোহল সেবন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে মুখ, গলা, লিভার এবং স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে। তাই অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত।
৪. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
অতিরিক্ত ওজন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
৫. প্রচুর পানি পান করুন
শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং কোষের কার্যক্রম উন্নত করে।
উপসংহার
ক্যানসার প্রতিরোধে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস কেবল ক্যানসার প্রতিরোধেই নয়, সামগ্রিকভাবে শরীরকে সুস্থ রাখতেও সহায়ক।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.