ডায়রিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা তরল মলত্যাগ এবং পেটের অস্বস্তি দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এটি শরীরের পানি এবং পুষ্টি হ্রাসের কারণ হতে পারে। চলুন, ডায়রিয়ার অর্থ, এর কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানি।
ডায়রিয়া কী?
ডায়রিয়া শব্দের বাংলা অর্থ হলো “পাতলা পায়খানা”। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মল অস্বাভাবিকভাবে তরল এবং বারবার ত্যাগ হয়। এটি একটি অস্থায়ী সমস্যা হতে পারে বা কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।
ডায়রিয়ার কারণ
১. সংক্রমণ:
- ভাইরাস (যেমন রোটাভাইরাস), ব্যাকটেরিয়া (যেমন সালমোনেলা), এবং পরজীবীর কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
২. অপরিষ্কার খাবার ও পানি:
- দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. অ্যালার্জি বা খাদ্য অসহিষ্ণুতা:
- কিছু খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- অ্যান্টিবায়োটিক বা কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলে অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৫. আন্ত্রিক প্রদাহ:
- ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো রোগের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
১. তরল বা পাতলা মল ত্যাগ। ২. পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্প। ৩. বমি বা বমি বমি ভাব। ৪. জ্বর। ৫. শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ, যেমন মুখ শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
ডায়রিয়ার ঝুঁকি
১. পানিশূন্যতা:
- ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে পানি এবং ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়, যা মারাত্মক হতে পারে।
২. পুষ্টির ঘাটতি:
- ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।
ঘরোয়া প্রতিকার
১. ওআরএস (ORS):
- শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে ওআরএস একটি কার্যকর উপায়। এটি বাড়িতে তৈরি করা যায় বা ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা যায়।
২. ফলমূল ও শাকসবজি:
- কলা, পাকা পেঁপে, এবং ধনেপাতা ডায়রিয়ার জন্য উপকারী।
৩. পানি পান করুন:
- প্রচুর পরিমাণে সেদ্ধ পানি বা ফ্লুইড পান করুন।
৪. ইসপগুলের ভুসি:
- এটি অন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
চিকিৎসা
১. অ্যান্টিবায়োটিক:
- যদি ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় তবে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
২. প্রোবায়োটিক:
- প্রোবায়োটিক অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. পরীক্ষা:
- ডায়রিয়ার কারণ নিশ্চিত করতে ডাক্তার রক্ত বা মলের পরীক্ষা করতে পারেন।
কবে ডাক্তার দেখাবেন?
১. যদি ডায়রিয়া তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়। ২. যদি মলে রক্ত বা পুঁজ দেখা যায়। ৩. উচ্চ জ্বর থাকলে। ৪. পানিশূন্যতার গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে।
উপসংহার
ডায়রিয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা যায়।